২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিপদ ডেকে আনতে পারে এক চুটকি সিঁদুর

Shamima Ahasana
  • আপডেট : ২৮ অগাস্ট ২০২৩, সোমবার
  • / 0

বিশেষ প্রতিবেদন: ‘এক চুটকি সিন্দুর কা কিমত তুম ক্যায়া জানো রমেশ বাবু’! ঈশ্বরকা আশীর্বাদ হোতা হ্যায় এক চুটকি সিন্দু্র’। হিন্দু রেওয়াজ অনুযায়ী সিঁদুর আশীর্বাদ। কিন্তু ভেজালের মহিমায় ক্রমশ অভিশাপ হয়ে উঠছে সিঁদুর।

হিন্দু বিবাহিত মহিলারা শুধু স্বামীর আয়ুর চিন্তা করেই সিঁদুর পরেন, এমনটা নয়। তাদের স্বপ্নের আকাশ জুড়ে থাকে টকটকে লাল রঙের এই প্রসাধনী। তাছাড়া হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ বলে ধরা হয় সিঁদুরকে। ধর্মীয় কারণে পরলেও আধুনিক যুগে সিঁদুর ফ্যাশানেরও একটা অংশ।

একটা সময় ছিল যখন সিঁদুর তৈরি করা হত হলুদ, চুন ও অন্যান্য ভেষজ উপাদান মিশিয়ে। তাতে অবশ্য শরীরের কোনও ক্ষতি হত না। কিন্তু শিল্পায়নের পর থেকে যখন অল্প সময়ে কারখানায় বেশি পণ্য তৈরির দৌড় শুরু হল, তখন পরিস্থিতি গেল পাল্টে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর কম দামে পণ্য বিক্রির ইঁদুর দৌড়ে সিঁদুরে মিশল সীসা ও পারদের মত ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর রাসায়নিক।

এই দুই বিষাক্ত রাসায়নিক শুধু ত্বক নয় শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পক্ষে ভয়ঙ্কর হতে পারে। আজকাল প্রতি ১ গ্রাম সিঁদুরে ১ মাইক্রোগ্রাম সিসা পাওয়া যাচ্ছে, যা মানব শরীরের পক্ষে বিপজ্জনকের চেয়েও খানিকটা বেশি বলা চলে।

 

কপাল থেকে সিঁদুর খাবারে পড়লে কি কি ক্ষতি হতে পারে: সদ্য স্নান করে কপালে আর শাঁখায় সিঁদুর লাগানোর পর খেতে বসে সিঁদুরের সামান্য গুঁড়ো ও যদি খাবারে পড়ে, তবে তা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। স্নায়ু, পাকস্থলি, ফুসফুস, কিডনি, ত্বকের মারাত্মক  ক্ষতি করে সীসা মিশ্রিত সিঁদুর। শ্বাসের সঙ্গে সিসা শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এমনকি হাড়েরও ক্ষতি করতে পারে।

শিশুদেরপক্ষে ক্ষতিকারক: বিশেষ করে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সিসা খুবই ক্ষতিকারক। তাদের খাবারে সিঁদুরের গুঁড়ো পড়লে স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মস্তিষ্কের ক্ষতি করে সিঁদুর : সিঁদুরে মিশ্রিত সীসা নার্ভাস সিস্টেমকে নষ্ট করে দিতে পারে। গবেষকদের মতে,  সিঁদুর খেয়ে ফেললে আইকিউ লেভেল কমেযেতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। মানসিক ব্যাধির শিকারও হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও ক্ষতি করতে পারে সিঁদুরে উপস্থিত ক্ষতিকারক রাসায়নিক। সিঁদুর একেবারে সামান্য পরিমাণও যদি রক্তে মিশে যায়, তাহলে নার্ভের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমার ফলে কোনও কিছু শেখার ক্ষমতাও কমতে থাকে।

পারদ থেকে ত্বকের ক্যান্সার: সিঁদুরে উপস্থিত পারদ থেকে ত্বকের ক্যান্সার হয়। বিজয়ার সিঁদুর খেলার পর ত্বকে র‍্যাশ বেরোয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন সীসা মিশ্রিত সিঁদুর পরে অনেকর সিতে চওড়া হয়ে যায়। চুল উঠে যায়। চুলকানিও হয়।

কণ্ঠস্বর কেড়ে নিতে পারে সিঁদুর: ভুল করে সিঁদুর খেয়ে ফেললে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।  ডাক্তারদের মতে, সিঁদুর ভুল করে খেয়ে ফেললে, কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি কণ্ঠস্বর হারিয়েও যেতে পারে। চিরকালের জন্য একজন মানুষ বোবা হয়ে যেতে পারে। সিঁদুর খেয়ে মানুষের মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে।

উল্লেখ্য, ভেষজ আবিরের মত করে যদি ভেষজ সিঁদুর তৈরি করা সম্ভব হয়, তবেই এই ক্ষতি থেকে থেকে বাঁচা সম্ভব।

 

রিপোর্টার

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিপদ ডেকে আনতে পারে এক চুটকি সিঁদুর

আপডেট : ২৮ অগাস্ট ২০২৩, সোমবার

বিশেষ প্রতিবেদন: ‘এক চুটকি সিন্দুর কা কিমত তুম ক্যায়া জানো রমেশ বাবু’! ঈশ্বরকা আশীর্বাদ হোতা হ্যায় এক চুটকি সিন্দু্র’। হিন্দু রেওয়াজ অনুযায়ী সিঁদুর আশীর্বাদ। কিন্তু ভেজালের মহিমায় ক্রমশ অভিশাপ হয়ে উঠছে সিঁদুর।

হিন্দু বিবাহিত মহিলারা শুধু স্বামীর আয়ুর চিন্তা করেই সিঁদুর পরেন, এমনটা নয়। তাদের স্বপ্নের আকাশ জুড়ে থাকে টকটকে লাল রঙের এই প্রসাধনী। তাছাড়া হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ বলে ধরা হয় সিঁদুরকে। ধর্মীয় কারণে পরলেও আধুনিক যুগে সিঁদুর ফ্যাশানেরও একটা অংশ।

একটা সময় ছিল যখন সিঁদুর তৈরি করা হত হলুদ, চুন ও অন্যান্য ভেষজ উপাদান মিশিয়ে। তাতে অবশ্য শরীরের কোনও ক্ষতি হত না। কিন্তু শিল্পায়নের পর থেকে যখন অল্প সময়ে কারখানায় বেশি পণ্য তৈরির দৌড় শুরু হল, তখন পরিস্থিতি গেল পাল্টে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর কম দামে পণ্য বিক্রির ইঁদুর দৌড়ে সিঁদুরে মিশল সীসা ও পারদের মত ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর রাসায়নিক।

এই দুই বিষাক্ত রাসায়নিক শুধু ত্বক নয় শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পক্ষে ভয়ঙ্কর হতে পারে। আজকাল প্রতি ১ গ্রাম সিঁদুরে ১ মাইক্রোগ্রাম সিসা পাওয়া যাচ্ছে, যা মানব শরীরের পক্ষে বিপজ্জনকের চেয়েও খানিকটা বেশি বলা চলে।

 

কপাল থেকে সিঁদুর খাবারে পড়লে কি কি ক্ষতি হতে পারে: সদ্য স্নান করে কপালে আর শাঁখায় সিঁদুর লাগানোর পর খেতে বসে সিঁদুরের সামান্য গুঁড়ো ও যদি খাবারে পড়ে, তবে তা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। স্নায়ু, পাকস্থলি, ফুসফুস, কিডনি, ত্বকের মারাত্মক  ক্ষতি করে সীসা মিশ্রিত সিঁদুর। শ্বাসের সঙ্গে সিসা শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এমনকি হাড়েরও ক্ষতি করতে পারে।

শিশুদেরপক্ষে ক্ষতিকারক: বিশেষ করে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সিসা খুবই ক্ষতিকারক। তাদের খাবারে সিঁদুরের গুঁড়ো পড়লে স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মস্তিষ্কের ক্ষতি করে সিঁদুর : সিঁদুরে মিশ্রিত সীসা নার্ভাস সিস্টেমকে নষ্ট করে দিতে পারে। গবেষকদের মতে,  সিঁদুর খেয়ে ফেললে আইকিউ লেভেল কমেযেতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। মানসিক ব্যাধির শিকারও হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও ক্ষতি করতে পারে সিঁদুরে উপস্থিত ক্ষতিকারক রাসায়নিক। সিঁদুর একেবারে সামান্য পরিমাণও যদি রক্তে মিশে যায়, তাহলে নার্ভের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমার ফলে কোনও কিছু শেখার ক্ষমতাও কমতে থাকে।

পারদ থেকে ত্বকের ক্যান্সার: সিঁদুরে উপস্থিত পারদ থেকে ত্বকের ক্যান্সার হয়। বিজয়ার সিঁদুর খেলার পর ত্বকে র‍্যাশ বেরোয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন সীসা মিশ্রিত সিঁদুর পরে অনেকর সিতে চওড়া হয়ে যায়। চুল উঠে যায়। চুলকানিও হয়।

কণ্ঠস্বর কেড়ে নিতে পারে সিঁদুর: ভুল করে সিঁদুর খেয়ে ফেললে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।  ডাক্তারদের মতে, সিঁদুর ভুল করে খেয়ে ফেললে, কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি কণ্ঠস্বর হারিয়েও যেতে পারে। চিরকালের জন্য একজন মানুষ বোবা হয়ে যেতে পারে। সিঁদুর খেয়ে মানুষের মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে।

উল্লেখ্য, ভেষজ আবিরের মত করে যদি ভেষজ সিঁদুর তৈরি করা সম্ভব হয়, তবেই এই ক্ষতি থেকে থেকে বাঁচা সম্ভব।