১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরবৎ বিক্রেতা থেকে সাব ইনস্পেক্টর, কেরলের অ্যানি সিবা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২১, সোমবার
  • / 1


পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: মনের জোর আর প্যাশন এই দুই’কে সম্বল করে শরবৎ বিক্রেতা থেকে সাব ইন্সপেক্টরের পদ। লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না অ্যানি সিবা’র কাছে। ভারতের কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের ভারকালা থানার সাব ইনস্পেক্টর হয়েছেন তিনি। আগে যে এলাকায় শরবৎ বেচে দিন কাটত অ্যানির। আজ সে এলাকায় তিনি একজন পুলিশের কর্মকর্তা ।
লড়াইটা একটু অন্য ধরনের ছিল অ্যানির। ভালোবেসে বাড়ির অমতে বিয়ে। ৩১ বছর বয়সী অ্যানি সিবা কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ার সময়ে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। এর পর বাড়ির অমতে প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন অ্যানি। সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন তিনি। এর পরেই তার জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। ঠিক এই সময়ে প্রেমিক ছেড়ে চলে যায় তাকে। অথৈ জলে পড়েন অ্যানি। বাড়িতেও ফেরার উপায় ছিল না তার। তার পর শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।
অ্যানি জানান, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এক রকম অসহায় অবস্থায় পড়ে যাই। একদিকে রোজগার নেই। তার পর সন্তানের দায়িত্ব কি করব বুঝতে পারছিলাম না। উপায় না দেখে বাপের বাড়ি যাই। কিন্তু আমাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোনও রকমে কিছু জমানো টাকা দিয়ে ছেলে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করি। ছেলের নাম রেখেছি শিবসূর্য।
সন্তানকে মানুষ করা আর পেট চালাবার জন্য মশলা, সাবানের ব্যবসা শুরু করি। পরে ধীরে ধীরে বিমা সংস্থার অ্যাজেন্ট হিসেবেও কাজ করতে থাকি।
এর পর ভারকালা এলাকায় লেবুর শরবৎ, আইসক্রিমও বিক্রি করতে থাকি। তবে এত লড়াইয়ের মধ্যেও নিজের মনের জোর ধরে রেখেছিলাম। সন্তানের মুখ চেয়ে আর নিজের অদম্য চেষ্টায় আবার পড়াশোনা শুরু করি। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হই।
২০১৪ সালে তিরুঅনন্তপুরমে পুলিশের পরীক্ষার জন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন অ্যানি। এক দিকে সংসার, ছেলেকে দেখাশোনা করা, তার পর চাকরির জন্য পড়াশোনা, সবটাই একা হাতে সামলে যাচ্ছিলেন অ্যানি। ২০১৬ সালে পুলিশের পরীক্ষায় পাস করে চাকরিও পান। ২০১৯ সালে আবার এসআই পদের পরীক্ষায় বসে পাস করেন। এ বছরের ২৫ জুন সেই ভরকালা এলাকারই সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে আসেন অ্যানি।

১০ বছর আগে যে এলাকায় অ্যানি লেবুর শরবৎ বিক্রি করতেন, আজ সেই এলাকা রক্ষার দায়িত্ব এই লড়াকু মেয়ের হাতে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শরবৎ বিক্রেতা থেকে সাব ইনস্পেক্টর, কেরলের অ্যানি সিবা

আপডেট : ২৮ জুন ২০২১, সোমবার


পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: মনের জোর আর প্যাশন এই দুই’কে সম্বল করে শরবৎ বিক্রেতা থেকে সাব ইন্সপেক্টরের পদ। লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না অ্যানি সিবা’র কাছে। ভারতের কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের ভারকালা থানার সাব ইনস্পেক্টর হয়েছেন তিনি। আগে যে এলাকায় শরবৎ বেচে দিন কাটত অ্যানির। আজ সে এলাকায় তিনি একজন পুলিশের কর্মকর্তা ।
লড়াইটা একটু অন্য ধরনের ছিল অ্যানির। ভালোবেসে বাড়ির অমতে বিয়ে। ৩১ বছর বয়সী অ্যানি সিবা কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ার সময়ে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। এর পর বাড়ির অমতে প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন অ্যানি। সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন তিনি। এর পরেই তার জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। ঠিক এই সময়ে প্রেমিক ছেড়ে চলে যায় তাকে। অথৈ জলে পড়েন অ্যানি। বাড়িতেও ফেরার উপায় ছিল না তার। তার পর শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।
অ্যানি জানান, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এক রকম অসহায় অবস্থায় পড়ে যাই। একদিকে রোজগার নেই। তার পর সন্তানের দায়িত্ব কি করব বুঝতে পারছিলাম না। উপায় না দেখে বাপের বাড়ি যাই। কিন্তু আমাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোনও রকমে কিছু জমানো টাকা দিয়ে ছেলে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করি। ছেলের নাম রেখেছি শিবসূর্য।
সন্তানকে মানুষ করা আর পেট চালাবার জন্য মশলা, সাবানের ব্যবসা শুরু করি। পরে ধীরে ধীরে বিমা সংস্থার অ্যাজেন্ট হিসেবেও কাজ করতে থাকি।
এর পর ভারকালা এলাকায় লেবুর শরবৎ, আইসক্রিমও বিক্রি করতে থাকি। তবে এত লড়াইয়ের মধ্যেও নিজের মনের জোর ধরে রেখেছিলাম। সন্তানের মুখ চেয়ে আর নিজের অদম্য চেষ্টায় আবার পড়াশোনা শুরু করি। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হই।
২০১৪ সালে তিরুঅনন্তপুরমে পুলিশের পরীক্ষার জন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন অ্যানি। এক দিকে সংসার, ছেলেকে দেখাশোনা করা, তার পর চাকরির জন্য পড়াশোনা, সবটাই একা হাতে সামলে যাচ্ছিলেন অ্যানি। ২০১৬ সালে পুলিশের পরীক্ষায় পাস করে চাকরিও পান। ২০১৯ সালে আবার এসআই পদের পরীক্ষায় বসে পাস করেন। এ বছরের ২৫ জুন সেই ভরকালা এলাকারই সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে আসেন অ্যানি।

১০ বছর আগে যে এলাকায় অ্যানি লেবুর শরবৎ বিক্রি করতেন, আজ সেই এলাকা রক্ষার দায়িত্ব এই লড়াকু মেয়ের হাতে।