১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বাতিল ধারায় মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে যা বিস্ময় এবং বিরক্তিকর, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৫ জুলাই ২০২১, সোমবার
  • / 0

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারায় এখনও মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ এই ধারা ২০১৫ সালে তাদের রায়ে বাতিল করে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই বিষয়টি সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে আসতেই যুগপৎ ‘বিরক্তিও ‘বিস্ময়প্রকাশ করল আদালত। এক এনজিও পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)-এর দায়ের করা এক আর্জির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি কে এম যোশেফ এবং বিচারপতি বি আর গাওয়াইয়ের বেঞ্চ এ দিন নোটিশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

এ দিন আদালত পিইউসিএল-এর আইনজীবী সঞ্জয় পারেখের সামনে মন্তব্য করে শ্রেয়া সিংঘল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৩৬-এ ধারা বাতিল করে দিয়েছিল অথচ এই ধারায় পুলিশ গ্রেফতার করছে মানুষকে এটা সত্যি ‘বিস্ময়কর এবং সাংঘাতিক’।

এই সময় আইনজীবী সঞ্জয় পারিখ আদালতকে বলেন, ২০১৯ সালে ২০১৫ সালের রায়ের ভিত্তিতে সমস্ত রাজ্য সরকারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশকে যেন নিষেধ করা হয় যে উক্ত বাতিল ধারায় কাউকে গ্রেফতার না করে। অথচ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে উক্ত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ৬৬-এ ধারায়। আইনজীবী পারিখের এই কথা শুনে বেঞ্চ মন্তব্য করে তারাও গ্রেফতারের এই পরিসংখ্যান দেখেছেন। তারপর শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে, আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পারিখ বলেন, আদালত একটা উপায় ঠিক করুক কারণ মানুষকে এর জন্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আদালতকে এ দিন হাজির ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল।

তিনি আদালতকে বলেন, তিনি তথ্য-প্রযুক্তি আইন খতিয়ে দেখেছেন। সেখানে ৬৬-এ নং ধারা রয়েছে তবে ফুটনোটে জানানো হয়েছে এই ধারা বাতিল করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ৬৬-এ ধারায় পুলিশকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যদি কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর বিষয় নিয়ে পোস্ট করে। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট তাদের একটি রায়ে এই ধারা বাতিল করে দিয়ে বলেছিল আইনটি ছিল ‘অস্বচ্ছ’ ‘সংবিধান বিরোধীএবং স্বাধীন মত প্রকাশের পরিপন্থী’।

সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে দুসপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার মামলায় উত্তর দিতে। এনজিওর আইনজীবী এ দিন সুপ্রিম কোর্টকে জানান যে, ধারা ৬৬-এ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এই ধারায় বিভিন্ন রাজ্যে ১৩০৭টি মামলা করা হয়েছে, যেমন- অন্ধÉপ্রদেশে ৩৮টি মামলা, অসমে ৫৯, দিল্লিতে ২৮, কর্নাটকে ১৪, তেলেঙ্গানায় ১৫, তামিলনাড়ুতে ৭ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩৭টি মামলা। তবে বেশিরভাগ মামলা হয়েছে এই বাতিল ধারায় মহারাষ্ট্রে (৩৮১), ঝাড়খণ্ডে (২৯১)উত্তরপ্রদেশ (২৪৫) এবং রাজস্থানে (১৯২)। পারিখ বলেন,  অথচ ৬৬-এ ধারা রদ হওয়ার পূর্বে ২২৯টি মামলা ঝুলছিল। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন আরও বলেন, ২০১৫ সালের রায়ের পর শুধু পুলিশ থানায় নয়, এই বাতিল ধারায় মামলা ঝুলে আছে বিভিন্ন ট্রায়াল কোর্টে। অথচ দেশের প্রতিটি হাইকোর্টের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ২০১৫ সালের রায় সহজেই উপলব্ধ।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বাতিল ধারায় মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে যা বিস্ময় এবং বিরক্তিকর, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

আপডেট : ৫ জুলাই ২০২১, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারায় এখনও মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ এই ধারা ২০১৫ সালে তাদের রায়ে বাতিল করে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই বিষয়টি সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে আসতেই যুগপৎ ‘বিরক্তিও ‘বিস্ময়প্রকাশ করল আদালত। এক এনজিও পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)-এর দায়ের করা এক আর্জির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি কে এম যোশেফ এবং বিচারপতি বি আর গাওয়াইয়ের বেঞ্চ এ দিন নোটিশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

এ দিন আদালত পিইউসিএল-এর আইনজীবী সঞ্জয় পারেখের সামনে মন্তব্য করে শ্রেয়া সিংঘল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৩৬-এ ধারা বাতিল করে দিয়েছিল অথচ এই ধারায় পুলিশ গ্রেফতার করছে মানুষকে এটা সত্যি ‘বিস্ময়কর এবং সাংঘাতিক’।

এই সময় আইনজীবী সঞ্জয় পারিখ আদালতকে বলেন, ২০১৯ সালে ২০১৫ সালের রায়ের ভিত্তিতে সমস্ত রাজ্য সরকারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশকে যেন নিষেধ করা হয় যে উক্ত বাতিল ধারায় কাউকে গ্রেফতার না করে। অথচ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে উক্ত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ৬৬-এ ধারায়। আইনজীবী পারিখের এই কথা শুনে বেঞ্চ মন্তব্য করে তারাও গ্রেফতারের এই পরিসংখ্যান দেখেছেন। তারপর শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে, আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পারিখ বলেন, আদালত একটা উপায় ঠিক করুক কারণ মানুষকে এর জন্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আদালতকে এ দিন হাজির ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল।

তিনি আদালতকে বলেন, তিনি তথ্য-প্রযুক্তি আইন খতিয়ে দেখেছেন। সেখানে ৬৬-এ নং ধারা রয়েছে তবে ফুটনোটে জানানো হয়েছে এই ধারা বাতিল করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ৬৬-এ ধারায় পুলিশকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যদি কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর বিষয় নিয়ে পোস্ট করে। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট তাদের একটি রায়ে এই ধারা বাতিল করে দিয়ে বলেছিল আইনটি ছিল ‘অস্বচ্ছ’ ‘সংবিধান বিরোধীএবং স্বাধীন মত প্রকাশের পরিপন্থী’।

সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে দুসপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার মামলায় উত্তর দিতে। এনজিওর আইনজীবী এ দিন সুপ্রিম কোর্টকে জানান যে, ধারা ৬৬-এ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এই ধারায় বিভিন্ন রাজ্যে ১৩০৭টি মামলা করা হয়েছে, যেমন- অন্ধÉপ্রদেশে ৩৮টি মামলা, অসমে ৫৯, দিল্লিতে ২৮, কর্নাটকে ১৪, তেলেঙ্গানায় ১৫, তামিলনাড়ুতে ৭ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩৭টি মামলা। তবে বেশিরভাগ মামলা হয়েছে এই বাতিল ধারায় মহারাষ্ট্রে (৩৮১), ঝাড়খণ্ডে (২৯১)উত্তরপ্রদেশ (২৪৫) এবং রাজস্থানে (১৯২)। পারিখ বলেন,  অথচ ৬৬-এ ধারা রদ হওয়ার পূর্বে ২২৯টি মামলা ঝুলছিল। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন আরও বলেন, ২০১৫ সালের রায়ের পর শুধু পুলিশ থানায় নয়, এই বাতিল ধারায় মামলা ঝুলে আছে বিভিন্ন ট্রায়াল কোর্টে। অথচ দেশের প্রতিটি হাইকোর্টের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ২০১৫ সালের রায় সহজেই উপলব্ধ।