নবাবের স্মৃতি বিজড়িত বাংলা- বিহার-ওড়িশার তোরণ সংস্কারের কাজ শুরু

- আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার
- / 1
আবদুল ওদুদ : ইতিহাস প্রসিদ্ধ মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রবেশের জন্য নবাব নাজিম হুমায়ুন জা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শহরে প্রবেশের তিনটি প্রধান তোরণ (গেট) তৈরি করেছিলেন। নবাব আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী হাজারদুয়ারি-সহ নবাবি নিশানাগুলি ছাড়াও হাজারদুয়ারির অদূরে চকে অবস্থিত তিনটি তোরণ তৈরি করেছিলেন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল বাংলা, বিহার এবং ওড়িশা তোরণ (গেট)। পর্যটকরা যেটাকে বাংলা, বিহার ওড়িশার গেট নামেই চেনেন। নবাবের স্মৃতিবিজড়িত বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন হারিয়ে যেতে বসেছে। বহু সম্পত্তি দখল হয়ে গিয়েছে। ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিদর্শনগুলি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ কারও নেই। যে কয়েকটি নিদর্শন জরাজীর্ণ অবস্থায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে সেগুলিকে সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে এসেছে মুর্শিদাবাদ পুরসভা। পুজোর আগেই কাজ শুরু করেছে পুরসভা। এবার বাংলা, বিহার, ওড়িশার গেট সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ধরের উদ্যোগে এই তিনটি গেট সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার ‘পুবের কলম’কে তিনি জানান, মাস দুয়েক থেকে হাজারদুয়ারি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মুর্শিদাবাদ এস্টেট ম্যানেজারকে তিনটি তোরণ সংস্কাররের অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে অনুমতি দিতে দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত কয়েকদিন আগে চেয়ারম্যানের কাছে তিনটি গেট বা তোরণ সংস্কারের অনুমতিপত্র পাঠিয়ে দেয়। এর পরই চেয়ারম্যান দলবল নিয়ে গিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে শুরু করেন।
তিনি জানান, বাংলা, বিহার, ওড়িশা তিনটি গেট জরাজীর্ণ অবস্থায় ও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তাকে পুনরুদ্ধার করে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক এই তিনটি গেটকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী কাঠামো অপরিবর্তিত রেখেই সংস্কার করা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান জানান, নবাবি ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করে নবাবি শহর হিসেবে ফিরিয়ে আনতে মুর্শিদাবাদ পুরসভা চেষ্টা করছে। পর্যটকরা হাজার দুয়ারি ভ্রমণে এসে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি খোঁজার চেষ্টা করেন। এই তিনটি গেট ইতিহাস প্রসিদ্ধ, দীর্ঘদিন যাবৎ সংরক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। মুর্শিদাবাদ এস্টেট এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নেওয়ায় পুরসভা নিজের উদ্যোগেই সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের নবাবি ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে এই উদ্যোগ। আগামিতে মুর্শিদাবাদ শহরে যে সমস্ত নবাবি নিদর্শন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে, মুর্শিদাবাদ এস্টেট অনুমতি দিলে পুরসভা সেগুলি সংস্কার করবে। তিনি বলেন, জেলার ইতিহাসবিদ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ পাশে থাকলে আরও অনেক কাজ করা সম্ভব।
জেলার অন্যতম প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ আলিমুজ্জামান বলেন, মুর্শিদাবাদ পুরসভাকে আমার ধন্যবাদ। বহু চেয়ারম্যান এসেছেন। কিন্তু নবাবি ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে তেমনভাবে কেউ উদ্যোগী হননি। বর্তমান চেয়ারম্যান নবাবি আমলের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা আগামী প্রজন্মকে দিশা দেখাবে। এই তিনটি নবাবি তোরণ নতুনভাবে সেজে উঠলে পর্যটকদের কাছে হাজারদুয়ারির গুরুত্ব আরও কয়েকগুণ বাড়বে। তিনি পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন রাখেন, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার প্রাসাদ হীরাঝিল এখনও অবহেলা এবং অনাদরে পড়ে রয়েছে। পুরসভা যদি এই হীরাঝিল সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তাহলে জেলাবাসী তথা পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে এসেই পর্যটকরা খোঁজে নবাবি আমলের স্মারক ও স্মৃতি। সিরাজকে হত্যার পর এই হীরাঝিল থেকেই ইংরেজরা সমস্ত ধনসম্পদ লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিল। আর তাতে সহযোগিতা করেছিল মীর জাফর ও তার বাহিনী। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ও তাঁর পরিবারের কবরস্থানটিকেও আরও সাজিয়ে তোলা হোক। বর্তমানে যে অবহেলায় পড়ে রয়েছে তার থেকে সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।