১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোভিড আবহে তারাপীঠে রথের নগর পরিক্রমা স্থগিত

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, সোমবার
  • / 0

দেবশ্রী মজুমদার, তারাপীঠ: কোভিড সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে তারাপীঠে রথে পরিক্রমা স্থগিত এবারও। গতবারও একই কারণে রথে মায়ের পরিক্রমা স্থগিত রাখা হয়েছিল। তাই তারাপীঠে এবার রথযাত্রা, লোকারণ্য, ধূমধাম কোনটাই হবে না। শুধুমাত্র মূল অনুষ্ঠানটি নিয়মরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
তারাপীঠ সেবায়েত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যাযয় বলেন, তারাপীঠে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। আর সেকারণে জমায়েত থেকে কোভিড সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই এবারও গতবারের মতো তারাপীঠে রথ পরিক্রমা স্থগিত রাখা হয়েছে। শুধু নিয়ম মাফিক বিকেল চারটা নাগাদ রথের ঘরে তারামায়ের প্রতিকৃতি একবার চাপানো হবে। তবে কোন পরিক্রমা হবে না। এদিন যথারীতি যেমন পুজো হয়, তেমনি হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে কমিটির সিদ্ধান্তে মায়ের ভক্তরাও খুব খুশি।
উল্লেখ্য, তারাপীঠে রথে থাকে না বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ। রথ বলতে আমরা পুরীর জগন্নাথদেবের রথকেই বুঝি। এরাজ্যের কলকাতার ইস্কন রথ, হুগলীর মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। সেখানেও বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে পরিক্রমা করেন। ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথে। কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা।
তারাপীঠের রথযাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর তেমন কারও মনে নেই। তবে মন্দিরের সেবাইত, সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই থেকে জানা যায়, ‘তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠের রথের প্রচলন করেছিলেন। সেই সময় একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়। সেই রথেই আজও মা তারা কে চড়ানো হয়। তারা মায়ের একটি রথ ঘর রয়েছে। যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সারা বছর ওই রথ ঘরেই পিতলের রথকে সংরক্ষিত রাখা হয়। রথ ঘরটি নির্মাণ করেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধু খাঁ। প্রাচীন রীতি মেনে মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠে। মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। সাজানো হয় রাজবেশে। তারপরই হাজার হাজার পূণ্যার্থী রথের রশিতে টান দেন। প্রতি বছর মা তারাকে রথে চড়িয়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করিয়ে সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয়। নগর পরিক্রমা না হওয়ায় এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে। এই রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশে প্যাড়া, বাতাসা বিতরণ করা হয় হরি লুটের মতো করে। সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুটোপুটি পড়ে যায়। কারণ এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না বলে কথিত আছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কোভিড আবহে তারাপীঠে রথের নগর পরিক্রমা স্থগিত

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, সোমবার

দেবশ্রী মজুমদার, তারাপীঠ: কোভিড সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে তারাপীঠে রথে পরিক্রমা স্থগিত এবারও। গতবারও একই কারণে রথে মায়ের পরিক্রমা স্থগিত রাখা হয়েছিল। তাই তারাপীঠে এবার রথযাত্রা, লোকারণ্য, ধূমধাম কোনটাই হবে না। শুধুমাত্র মূল অনুষ্ঠানটি নিয়মরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
তারাপীঠ সেবায়েত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যাযয় বলেন, তারাপীঠে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। আর সেকারণে জমায়েত থেকে কোভিড সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই এবারও গতবারের মতো তারাপীঠে রথ পরিক্রমা স্থগিত রাখা হয়েছে। শুধু নিয়ম মাফিক বিকেল চারটা নাগাদ রথের ঘরে তারামায়ের প্রতিকৃতি একবার চাপানো হবে। তবে কোন পরিক্রমা হবে না। এদিন যথারীতি যেমন পুজো হয়, তেমনি হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে কমিটির সিদ্ধান্তে মায়ের ভক্তরাও খুব খুশি।
উল্লেখ্য, তারাপীঠে রথে থাকে না বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ। রথ বলতে আমরা পুরীর জগন্নাথদেবের রথকেই বুঝি। এরাজ্যের কলকাতার ইস্কন রথ, হুগলীর মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। সেখানেও বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে পরিক্রমা করেন। ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথে। কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা।
তারাপীঠের রথযাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর তেমন কারও মনে নেই। তবে মন্দিরের সেবাইত, সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই থেকে জানা যায়, ‘তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠের রথের প্রচলন করেছিলেন। সেই সময় একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়। সেই রথেই আজও মা তারা কে চড়ানো হয়। তারা মায়ের একটি রথ ঘর রয়েছে। যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সারা বছর ওই রথ ঘরেই পিতলের রথকে সংরক্ষিত রাখা হয়। রথ ঘরটি নির্মাণ করেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধু খাঁ। প্রাচীন রীতি মেনে মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠে। মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। সাজানো হয় রাজবেশে। তারপরই হাজার হাজার পূণ্যার্থী রথের রশিতে টান দেন। প্রতি বছর মা তারাকে রথে চড়িয়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করিয়ে সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয়। নগর পরিক্রমা না হওয়ায় এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে। এই রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশে প্যাড়া, বাতাসা বিতরণ করা হয় হরি লুটের মতো করে। সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুটোপুটি পড়ে যায়। কারণ এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না বলে কথিত আছে।