২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশে

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৪ জুলাই ২০২১, রবিবার
  • / 1

বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল করোনার বিবর্তিত রূপ ডেল্টা। তারপর থেকে করোনার অতিসংক্রামক এই স্ট্রেনটি খুব কম সময়ের মধ্যেই বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করে বলেছেন, টিকা দান ও গ্রহণের কম হার, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং কমে আসা ও বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগস্টের মধ্যেই গ্রাস করবে সমগ্র ইউরোপ ও আমেরিকাকে। তবে ডেল্টা এশিয়া মহাদেশেরও যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  করোনার অতিসংক্রামক এই ধরনটির কবলে পড়ে ধুঁকছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দেশ। দেশগুলিতে দ্রুত সংক্রমণের অন্যতম কারণ হিসেবে ভ্যাকসিন সংকটকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, দ্রুতগতিতে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পুরো দুনিয়ায় থাবা বসাতে পারে।  ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের ১০০ দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেই ডেল্টায় আক্রান্তের হার বেশি। ভারতে সম্প্রতি করোনার তাণ্ডব কিছুটা কমলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনার সবকটি স্ট্রেনের চেয়ে ডেল্টাই সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই ভারত থেকে প্রতিবেশী নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। এই তিন দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত নাজুক হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নেপাল ও আফগানিস্তানকে।

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াজিদ মাজরুহ বলেন, গত জুনে দেশে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ছিল। রাজধানী কাবুলে ৬০ শতাংশই ডেল্টায় সংক্রামিত। এদিকে, বিগত কয়েক সপ্তাহে  বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়ায় ডেল্টার প্রকোপ বাড়ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে ভারতের। ফলে সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটি। গত ২৫ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত চালানো একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় রাজধানী ঢাকায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই ডেল্টায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এশিয়ার দেশগুলিতে সংক্রমণের মূল কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতাকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পায়নি ঢাকা। নিরুপায় হয়েই অন্য উৎস থেকে টিকা আনতে সচেষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পেরেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পাশাপাশি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তার বিষদাঁত বসিয়েছে ইন্দোনেশিয়াতেও। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন জারি থাকবে ২০ জুলাই পর্যন্ত। ইন্দোনেশিয়াতেও ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা নেই। এখনও পর্যন্ত দেশটির মাত্র ৫ শতাংশ নাগরিকেরই টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ডেও ডেল্টা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশটিতে তীব্র হয়েছে ভ্যাকসিন সংকট। তবে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে এশিয়ার অপর দেশ মঙ্গোলিয়া। দেশটির ৫০ শতাংশ মানুষই টিকা পেয়েছেন। এই সংক্রমণ রুখতে গেলে টিকাকরণের বিকল্প নেই বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশে

আপডেট : ৪ জুলাই ২০২১, রবিবার

বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল করোনার বিবর্তিত রূপ ডেল্টা। তারপর থেকে করোনার অতিসংক্রামক এই স্ট্রেনটি খুব কম সময়ের মধ্যেই বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করে বলেছেন, টিকা দান ও গ্রহণের কম হার, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং কমে আসা ও বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগস্টের মধ্যেই গ্রাস করবে সমগ্র ইউরোপ ও আমেরিকাকে। তবে ডেল্টা এশিয়া মহাদেশেরও যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  করোনার অতিসংক্রামক এই ধরনটির কবলে পড়ে ধুঁকছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দেশ। দেশগুলিতে দ্রুত সংক্রমণের অন্যতম কারণ হিসেবে ভ্যাকসিন সংকটকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, দ্রুতগতিতে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পুরো দুনিয়ায় থাবা বসাতে পারে।  ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের ১০০ দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেই ডেল্টায় আক্রান্তের হার বেশি। ভারতে সম্প্রতি করোনার তাণ্ডব কিছুটা কমলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনার সবকটি স্ট্রেনের চেয়ে ডেল্টাই সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই ভারত থেকে প্রতিবেশী নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। এই তিন দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত নাজুক হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নেপাল ও আফগানিস্তানকে।

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াজিদ মাজরুহ বলেন, গত জুনে দেশে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ছিল। রাজধানী কাবুলে ৬০ শতাংশই ডেল্টায় সংক্রামিত। এদিকে, বিগত কয়েক সপ্তাহে  বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়ায় ডেল্টার প্রকোপ বাড়ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে ভারতের। ফলে সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটি। গত ২৫ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত চালানো একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় রাজধানী ঢাকায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই ডেল্টায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এশিয়ার দেশগুলিতে সংক্রমণের মূল কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতাকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পায়নি ঢাকা। নিরুপায় হয়েই অন্য উৎস থেকে টিকা আনতে সচেষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পেরেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পাশাপাশি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তার বিষদাঁত বসিয়েছে ইন্দোনেশিয়াতেও। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন জারি থাকবে ২০ জুলাই পর্যন্ত। ইন্দোনেশিয়াতেও ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা নেই। এখনও পর্যন্ত দেশটির মাত্র ৫ শতাংশ নাগরিকেরই টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ডেও ডেল্টা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশটিতে তীব্র হয়েছে ভ্যাকসিন সংকট। তবে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে এশিয়ার অপর দেশ মঙ্গোলিয়া। দেশটির ৫০ শতাংশ মানুষই টিকা পেয়েছেন। এই সংক্রমণ রুখতে গেলে টিকাকরণের বিকল্প নেই বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।