বিজেপির মতো ভাববাচ্যে কথা বলছে ইডি-সিবিআই, এই ভয় আমার ভালো লেগেছে: অভিষেক
- আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 0
মধুছন্দা চক্রবর্তী: বিজেপির মতো ভাববাচ্যে কথা বলছে ইডি-সিবিআই।এই ভয় আমার ভালো লেগেছে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মেগা সভা থেকে থেকে এই নিয়ে বিজেপি তথা এজেন্সিগুলিকে সরাসরি আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘খিলাড়ি’ সিনেমায় অক্ষয় কুমারের ডায়ালগের কায়দায় তিনি যা বললেন, তার হিন্দি অনুবাদ করলে শোনায়— ‘ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা’। চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়ার কায়দায় উল্লেখ করেছে সিবিআই। প্রত্যুত্তরে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য সভায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক। বললেন, পাঁচ বছর আগেও বলেছি, আমার বিরুদ্ধে যদি এক কুচিও প্রমাণ ইডি-সিবিআই আদালতে দিতে পারেন, তাহলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করব।প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। কিন্তু কী তাঁর পরিচয়? পৈতৃক বা রাজনৈতিক কোনও পরিচয়ই স্পষ্ট করা হয়নি সেই চার্জশিটে। তাই এই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সে-কথার উল্লেখই ছিল না চার্জশিটে। বুধবারই এর কড়া জবাব দিয়েছিলেন অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
যেখানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে এই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে সিবিআই তার ২৮ পাতার চার্জশিটে সুজয়কৃষ্ণ-সহ কয়েকজেনের অডিয়ো ক্লিপের কথা জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, অডিয়োতে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শোনা গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে বৃহস্পতিবার অভিষেক বলেন, সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, আমার বিরুদ্ধে নাকি সিবিআই চার্জশিট দিয়েছে। আসলে দু’জায়গায় খালি আমার নামটা ব্যবহার করা হয়েছে। কে অভিষেক, তার কোনও পরিচয় দেওয়া নেই। সিবিআই ভাববাচ্যে কথা লিখেছে। ওদের অবস্থাও বিজেপির মতো। তারপরই কটাক্ষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন— এই ভয় আমার ভালো লেগেছে।
এ দিন বাজারে ছড়ানো গুজব নিয়ে মন্তব্য করে অভিষেক বলেন, কেউ কেউ বলছে অভিষেক বিজেপিতে যাচ্ছে, নতুন দল তৈরি করছে। অভিষেক বলেন, আমি বেইমান নই। আমি অন্য ধাতুতে তৈরি, মানুষের কাছে যাব, মাথা নত করে কাজ করব, কিন্তু বিজেপির বশ্যতা স্বীকার করার লোক আমি নই। এ দিন অভিষেক মনে করিয়ে দেন, বিজেপিতে যোগদান করার আগে, মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের আগাম ইঙ্গিত অমিই দিয়েছিলাম। আগাম চিহ্নিত করেছিলাম তাঁদের।
বেশ কিছুদিন ধরে অন্তত পুজোর পর রাজ্যস্তরে তৃণমূলের দলীয় সংগঠনের কাজে দেখা যাচ্ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই প্রসঙ্গেই নেত্রীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এমন গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল। সেই গুঞ্জনে জল ঢেলে দিল বৃহস্পতিবারের মেগা বৈঠকে আবেগভরা কথা— আমার গলা কেটে দিলেও কাটা গলা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ বেরোবে। আবাস, গ্রামীণ রাস্তায় তৈরি, একশো দিনের কাজ ইত্যাদি প্রকল্পে কেন্দ্র বঞ্চনা করলেও মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের কোষাগারের টাকায় সেইসব প্রকল্পের সুবিধে উপভোক্তাদের দিচ্ছেন, সে-কথাও প্রকাশ্যে বলেন অভিষেক। তাঁর সেবাশ্রয় প্রকল্পের নেপথ্য প্রেরণা সম্পর্কে বলেন, লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পরে তিন মাস ঘুমোতে পারিনি। ভাবতাম, কীভাবে মানুষের এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যায়। তারপরেই সেবাশ্রয় কর্মসূচির অবতারণা।
তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বলে পরিচিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে বার্তা দিয়ে বলেন, ছাব্বিশের বিধানসভায় লড়াইয়ের ময়দানে এক ছটাক জমিও ছাড়া যাবে না। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১৪টা আসন পেয়েছিল। এবার তার চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা থাকবে আরও বেশি। অন্তত ২১৫টা আসন পেতেই হবে। বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ করিয়ে দেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে গতবছর ঠিক এই দিনে বিজেপি সন্দেশখালি নিয়ে চক্রান্ত করেছিল। নির্বাচন চলে গিয়েছে, কিন্তু তারপরও একের পর এক ষড়যন্ত্র হয়ে চলেছে। দল ভাঙার, পশ্চিমবঙ্গকে ছোট করার চক্রান্ত চলছে। অভিষেক বার্তা দেন, বুকের রক্ত দিয়ে আগলে রাখতে হবে দলকে। দল রাখতে সবাইকে পরিশ্রমী হতে বলেন, অভিষেক ব¨্যােপাধ্যায়। তাঁর কথায় কাজে যেন শিথিলতা না আসে। এই সূত্রেই বলেন, যাঁরা মিছিলে হাঁটছেন, পোস্টার লাগাচ্ছেন, মাঠে-রাস্তায় নেমে কাজ করছেন, এমন কর্মীরাই দলের আসল সম্পদ। অনেকে সস্তায় খবরে টিকে থাকতে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে অনেক কথা বলছেন। তাঁদেরও এ দিন সতর্ক করে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিধায়ক, সাংসদ, চেয়ারম্যান সবার উদ্দেশে বলেন, কেউ ক্ষমতা দেখাবেন না। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সাংগঠনিক সম্মেলনে অভিষেক ব¨্যােপাধ্যায়ের অনেক কথাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তার অনুরণন।