২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিরামিড বানাতে উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করেছিল মিশরীয়রা

Sumana Puber Kalom
  • আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 0

মিশরের পিরামিডগুলির নির্মাণ বৈশিষ্ট আজ গোটা বিশ্বকে হতবাক করে। প্রশ্ন জাগে কীভাবে বিশালাকার পাথরখণ্ডগুলো ওই উঁচুতে তোলা হয়েছিল। কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন কী আলাদা কোনো মেশিন ছিল ? যে পাথর দিয়ে পিরামিড বানানো হয়েছে সেই এক একটি একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। আধুনিক গবেষনা বলছে হাড্রোলিক পাওয়ার ব্যবহার করেছিল মিশরীয়রা। তাতেই হয়েছিল এই অসাধ্যসাধন।

শতাধীর পর শতাধী ধরে মিশরের গ্রেট পিরামিডগুলি বিশাল আকার এবং স্থাপত্য কৌশলের জন্য বিশ্বকে আকর্ষণ করে আসছে। তবে এগুলি কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল তার সঠিক পদ্ধতি নিয়ে বহুকাল ধরে বিতর্ক চলছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেছেন, প্রাচীন মিশরীয়রা গ্রেট পিরামিডগুলি তৈরি করতে প্রাচীন উচ্চপ্রযুক্তি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে স্টেপ পিরামিড বানাতে একটি অত্যাধুনিক এবং অসাধারণ কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এটা হতেই পারে যে এমন নির্মাণের জন্য হাইড্রোলিক-পাওয়ারড লিফট ব্যবহার করা হয়েছিল। আগে ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করতেন যে পিরামিড নির্মাণের জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা র‌্যাম্প এবং লিভার ব্যবহার করেছিল। তবে ৫ আগস্ট পিএলওএস ওয়ানে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলা হয়েছে। এখন দাবি করা হচ্ছে, এর জন্য সেদিন হাইড্রোলিক পাওয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল।
ফ্রান্সের প্যালিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিইএ জেভিয়ার ল্যান্ডরেউ-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ডোজারের স্টেপ পিরামিড নির্মাণে প্রাচীন মিশরীয়রা হাইড্রোলিক লিফট ব্যবস্থার মাধ্যমে জল ব্যবহার করে পাথরগুলিকে উপরে তুলেছিল। এই তত্ত্বটি প্রাচীন মিশরীয়দের অত্যন্ত উন্নত হাইড্রোলিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
গবেষকদের মতে, স্টেপ পিরামিডের মধ্যে দু’টি শাফট ছিল, যা সম্ভবত জলচালিত একটি বয়েন্সি লিফটিং যন্ত্র হিসেবে কাজ করত। এই প্রক্রিয়াটি ছিল এমন, যখন জল শাফটগুলিতে প্রবাহিত হত, এটি একটি প্ল্যাটফর্মকে ভাসিয়ে রাখত, যা ভারী পাথরগুলো বহন করত। জলের চাপের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি উপরে উঠলে পাথরগুলো স্থানান্তর করা সহজ হতো, যা শারীরিক শ্রম কমিয়ে দিত।
গবেষকরা গিসর এল-মুদির ইনক্লোজার নামক একটি কাঠামোর উল্লেখ করেছেন, যেটি সম্ভবত একটি চেক ড্যাম ছিল, যা জল সংগ্রহ এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত। তারা আরও দাবি করেছেন যে, পিরামিডের আশপাশে খনন করা কিছু গহ´র জল পরিশোধন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত। পরে সেই পরিষ্কার জল পিরামিডের লিফটিং শাফটগুলিতে প্রবাহিত হত।
গবেষকরা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘ভলকানো নির্মাণ’ নামে অভিহিত করেছেন, যেখানে জলের চাপের মাধ্যমে পাথরগুলো ধীরে ধীরে উপরে ওঠানো হত। যদি এটি সঠিক প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে প্রথম ঘটনা যেখানে জলীয় শক্তি ব্যবহার করে পাথরের নির্মাণ করা হয়েছে।
যদিও এই তত্ত্বটি এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তবে এর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এটি ভবিষ্যতে প্রমাণিত হয় যে প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড নির্মাণে জলীয় শক্তি ব্যবহার করেছেন, তবে এটি আমাদের তাদের প্রকৌশলগত সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা সম্পূর্ণ পালটে দিতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন যে তাদের গবেষণার ফলে একটি ড্যাম, একটি জল পরিশোধন ব্যবস্থা এবং একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ব্যবস্থা আবিÜৃñত হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, মিশরের পিরামিড নির্মাণে হাইড্রোলিক শক্তির ব্যবহার বৈজ্ঞানিকদের সামনে গবেষণার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। যদি এটি সত্যি হয়, তবে এই আবিষ্কার পিরামিডের রহস্যে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে। তা প্রমাণ করবে প্রাচীন মিশরীয়রা আমাদের কল্পনার থেকেও অনেক বেশি উন্নত ছিল।

রিপোর্টার

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পিরামিড বানাতে উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করেছিল মিশরীয়রা

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

মিশরের পিরামিডগুলির নির্মাণ বৈশিষ্ট আজ গোটা বিশ্বকে হতবাক করে। প্রশ্ন জাগে কীভাবে বিশালাকার পাথরখণ্ডগুলো ওই উঁচুতে তোলা হয়েছিল। কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন কী আলাদা কোনো মেশিন ছিল ? যে পাথর দিয়ে পিরামিড বানানো হয়েছে সেই এক একটি একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। আধুনিক গবেষনা বলছে হাড্রোলিক পাওয়ার ব্যবহার করেছিল মিশরীয়রা। তাতেই হয়েছিল এই অসাধ্যসাধন।

শতাধীর পর শতাধী ধরে মিশরের গ্রেট পিরামিডগুলি বিশাল আকার এবং স্থাপত্য কৌশলের জন্য বিশ্বকে আকর্ষণ করে আসছে। তবে এগুলি কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল তার সঠিক পদ্ধতি নিয়ে বহুকাল ধরে বিতর্ক চলছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেছেন, প্রাচীন মিশরীয়রা গ্রেট পিরামিডগুলি তৈরি করতে প্রাচীন উচ্চপ্রযুক্তি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে স্টেপ পিরামিড বানাতে একটি অত্যাধুনিক এবং অসাধারণ কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এটা হতেই পারে যে এমন নির্মাণের জন্য হাইড্রোলিক-পাওয়ারড লিফট ব্যবহার করা হয়েছিল। আগে ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করতেন যে পিরামিড নির্মাণের জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা র‌্যাম্প এবং লিভার ব্যবহার করেছিল। তবে ৫ আগস্ট পিএলওএস ওয়ানে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলা হয়েছে। এখন দাবি করা হচ্ছে, এর জন্য সেদিন হাইড্রোলিক পাওয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল।
ফ্রান্সের প্যালিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিইএ জেভিয়ার ল্যান্ডরেউ-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ডোজারের স্টেপ পিরামিড নির্মাণে প্রাচীন মিশরীয়রা হাইড্রোলিক লিফট ব্যবস্থার মাধ্যমে জল ব্যবহার করে পাথরগুলিকে উপরে তুলেছিল। এই তত্ত্বটি প্রাচীন মিশরীয়দের অত্যন্ত উন্নত হাইড্রোলিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
গবেষকদের মতে, স্টেপ পিরামিডের মধ্যে দু’টি শাফট ছিল, যা সম্ভবত জলচালিত একটি বয়েন্সি লিফটিং যন্ত্র হিসেবে কাজ করত। এই প্রক্রিয়াটি ছিল এমন, যখন জল শাফটগুলিতে প্রবাহিত হত, এটি একটি প্ল্যাটফর্মকে ভাসিয়ে রাখত, যা ভারী পাথরগুলো বহন করত। জলের চাপের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি উপরে উঠলে পাথরগুলো স্থানান্তর করা সহজ হতো, যা শারীরিক শ্রম কমিয়ে দিত।
গবেষকরা গিসর এল-মুদির ইনক্লোজার নামক একটি কাঠামোর উল্লেখ করেছেন, যেটি সম্ভবত একটি চেক ড্যাম ছিল, যা জল সংগ্রহ এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত। তারা আরও দাবি করেছেন যে, পিরামিডের আশপাশে খনন করা কিছু গহ´র জল পরিশোধন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত। পরে সেই পরিষ্কার জল পিরামিডের লিফটিং শাফটগুলিতে প্রবাহিত হত।
গবেষকরা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘ভলকানো নির্মাণ’ নামে অভিহিত করেছেন, যেখানে জলের চাপের মাধ্যমে পাথরগুলো ধীরে ধীরে উপরে ওঠানো হত। যদি এটি সঠিক প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে প্রথম ঘটনা যেখানে জলীয় শক্তি ব্যবহার করে পাথরের নির্মাণ করা হয়েছে।
যদিও এই তত্ত্বটি এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তবে এর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এটি ভবিষ্যতে প্রমাণিত হয় যে প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড নির্মাণে জলীয় শক্তি ব্যবহার করেছেন, তবে এটি আমাদের তাদের প্রকৌশলগত সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা সম্পূর্ণ পালটে দিতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন যে তাদের গবেষণার ফলে একটি ড্যাম, একটি জল পরিশোধন ব্যবস্থা এবং একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ব্যবস্থা আবিÜৃñত হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, মিশরের পিরামিড নির্মাণে হাইড্রোলিক শক্তির ব্যবহার বৈজ্ঞানিকদের সামনে গবেষণার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। যদি এটি সত্যি হয়, তবে এই আবিষ্কার পিরামিডের রহস্যে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে। তা প্রমাণ করবে প্রাচীন মিশরীয়রা আমাদের কল্পনার থেকেও অনেক বেশি উন্নত ছিল।