২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানসম্ভবা মায়েদেরও প্রয়োজনে কৃমির ওষুধ দিতে হবে

Sumana Puber Kalom
  • আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 0

কৃমির মতো সমস্যা যে কোনওভাবেই অবহেলা করার মতো নয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ডিওয়ার্মিং ডে অর্থাৎ জাতীয় কৃমিনাশক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শিশুদের ছাড়াও কৃমির ওষুধ  প্রয়োজনে খাওয়া দরকার প্রেগন্যান্ট মায়েদেরও। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন শ্যামলী চক্রবর্তী।

শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কৃমি একটা সাধারণ সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে যত শিশু কৃমির সমস্যায় ভুগছে তার মধ্যে ২৮ শতাংশই ভারতের। তবে প্রাপ্তবয়স্করা যে এর থেকে একেবারে মুক্ত তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বিশেষত, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের কৃমির সমস্যা হলে বাচ্চার ওপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে।

কৃমির সংক্রমণ নানা কারণে হতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নন্দিতা সাহার মতে, সাধারণত মলমূত্র, নখের ময়লা, অপরিশ্রুত পানীয় জল ইত্যাদির মাধ্যমেই কৃমি  শরীরে প্রবেশ করে। শিশুরা কৃমির ডিম বা জীবাণু সংক্রমিত কোনও জায়গায় খেলাধুলোর সময় বা কোনও পশুর গায়ে হাত দেওয়ার পর সেই হাত মুখে দিলে কৃমি হতে পারে। দেখা গেছে  বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে শুরু করলে বা নতুন হাঁটার  সময়  কৃমির সংক্রমণ শুরু হয়। আর শরীরে সংক্রমণ ঘটে মুখ দিয়েই। খাবারের বা হাতের মাধ্যমে কৃমির ডিম মুখ দিয়ে পেটে যায়। পেটে গিয়ে ডিম থেকে লার্ভা হয়। সেই লার্ভা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে খাবার শুষে পূর্ণাঙ্গ কৃমিতে পরিণত হয়।  এই সব কৃমি যখন মলদ্বার থেকে বেরয় তখনই চুলকানির সমস্যা হয়। এছাড়াও নানারকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন, টেপওয়ার্ম বা ফিতে কৃমির উপসর্গ হল জন্ডিস, বমিভাব, বমি হওয়া, হজম ক্ষমতা কমে যাওয়া, বারবার খাওয়া এবং পুষ্টির অভাব।  আবার রাউন্ড ওয়ার্ম বা গোল কৃমির উপসর্গ ডায়রিয়া, পায়খানার সঙ্গে কৃমি বেরনো, শুকনো কাশি ও জ্বর। আর পিনওয়ার্ম বা কুচো কৃমির উপসর্গ হল মলদ্বারে চুলকানো।  এই অস্বস্তির কারণে রাতে ভাল ঘুম না হওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা লাগা। শিশুদের মধ্যে এই সমস্যাই বেশি হয়। এছাড়া হুক কৃমির উপসর্গ হাঁচি, কাশি, ক্লান্তি ও অ্যানিমিয়া। তাই শিশুর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনে নেওয়া দরকার কৃমির জন্য এমন সমস্যা হচ্ছে কিনা। তেমন হলে ওষুধ দিয়ে সমস্যা দূর করতে হবে। ডাঃ সাহা আরো জানান, কৃমির ওষুধ দেওয়ার সময় তার বয়স ও ওজনের কথা মাথায় রেখে ডোজ ঠিক করতে হয়। একবার ওষুধ দেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পরে আবার ওষুধ খেতে হয়। আর শুধু বাচ্চাদের নয়, একই সঙ্গে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও ওষুধ খেতে হয়।

কৃমির সমস্যা জীবন সংশয়ের সঙ্গে সরাসরি দায়ী না হলেও নানারকম সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই কৃমি সম্পর্কে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও সতর্ক থাকা দরকার। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার জন্য মূলত দায়ী স্ট্রিট ফুড এর অভ্যাস, ঠিক মতো রান্না করা খাবার না খাওয়া, বাইরে বেরিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ইত্যাদি। যদি এই সমস্যা আশপাশে প্রায়ই শোনা যায় তাহলে সবচেয়ে ভাল হয় বছরে একবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খাওয়া। অন্যথায় এই কৃমি দীর্ঘদিন শরীরে থাকার ফলে ফুসফুস ও  লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এমনকী নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কৃমি দূর করার বিষয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকটা সচেতন হলেও বয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সচেতনতা এসেছে তেমন বলা যায় না। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের অনেকেই এ ব্যাপারটা অবহেলা করেন। যা একেবারেই উচিত নয়। কিছু কৃমি সংক্রমণে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা গর্ভস্থ ভ্রূণের নানান সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অথচ কৃমির ওষুধ ঠিক সময় খেলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা জানান, হবু মায়েদের সময়মতো কৃমির ওষুধ দিলে প্রায় ১৪ শতাংশ সদ্যোজাতর মৃত্যুহার রোধ করা যায়।  এছাড়া সন্তানের কম ওজনের আশংকাও অনেক কমে যায়। তবে প্রথম ট্রাইমেস্টারে  এই ওষুধ দেওয়া চলবে না। দিতে হবে সেকেন্ড বা থার্ড ট্রাইমেস্টারে।  হু- এর মতে, সেকেন্ড বা থার্ড ট্রাইমেস্টারে অ্যালবেন্ডাজোল ৪০০ গ্রামের একটা ডোজ দেওয়া উচিত।  কিছু সাইড এফেক্টস হতে পারে। যেমন, বমি হওয়া বা বমিভাব। তবে জন্য মা কিংবা শিশুর ওপর কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে না।  তবে ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

রিপোর্টার

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সন্তানসম্ভবা মায়েদেরও প্রয়োজনে কৃমির ওষুধ দিতে হবে

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার

কৃমির মতো সমস্যা যে কোনওভাবেই অবহেলা করার মতো নয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ডিওয়ার্মিং ডে অর্থাৎ জাতীয় কৃমিনাশক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শিশুদের ছাড়াও কৃমির ওষুধ  প্রয়োজনে খাওয়া দরকার প্রেগন্যান্ট মায়েদেরও। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন শ্যামলী চক্রবর্তী।

শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কৃমি একটা সাধারণ সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে যত শিশু কৃমির সমস্যায় ভুগছে তার মধ্যে ২৮ শতাংশই ভারতের। তবে প্রাপ্তবয়স্করা যে এর থেকে একেবারে মুক্ত তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বিশেষত, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের কৃমির সমস্যা হলে বাচ্চার ওপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে।

কৃমির সংক্রমণ নানা কারণে হতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নন্দিতা সাহার মতে, সাধারণত মলমূত্র, নখের ময়লা, অপরিশ্রুত পানীয় জল ইত্যাদির মাধ্যমেই কৃমি  শরীরে প্রবেশ করে। শিশুরা কৃমির ডিম বা জীবাণু সংক্রমিত কোনও জায়গায় খেলাধুলোর সময় বা কোনও পশুর গায়ে হাত দেওয়ার পর সেই হাত মুখে দিলে কৃমি হতে পারে। দেখা গেছে  বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে শুরু করলে বা নতুন হাঁটার  সময়  কৃমির সংক্রমণ শুরু হয়। আর শরীরে সংক্রমণ ঘটে মুখ দিয়েই। খাবারের বা হাতের মাধ্যমে কৃমির ডিম মুখ দিয়ে পেটে যায়। পেটে গিয়ে ডিম থেকে লার্ভা হয়। সেই লার্ভা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে খাবার শুষে পূর্ণাঙ্গ কৃমিতে পরিণত হয়।  এই সব কৃমি যখন মলদ্বার থেকে বেরয় তখনই চুলকানির সমস্যা হয়। এছাড়াও নানারকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন, টেপওয়ার্ম বা ফিতে কৃমির উপসর্গ হল জন্ডিস, বমিভাব, বমি হওয়া, হজম ক্ষমতা কমে যাওয়া, বারবার খাওয়া এবং পুষ্টির অভাব।  আবার রাউন্ড ওয়ার্ম বা গোল কৃমির উপসর্গ ডায়রিয়া, পায়খানার সঙ্গে কৃমি বেরনো, শুকনো কাশি ও জ্বর। আর পিনওয়ার্ম বা কুচো কৃমির উপসর্গ হল মলদ্বারে চুলকানো।  এই অস্বস্তির কারণে রাতে ভাল ঘুম না হওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা লাগা। শিশুদের মধ্যে এই সমস্যাই বেশি হয়। এছাড়া হুক কৃমির উপসর্গ হাঁচি, কাশি, ক্লান্তি ও অ্যানিমিয়া। তাই শিশুর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনে নেওয়া দরকার কৃমির জন্য এমন সমস্যা হচ্ছে কিনা। তেমন হলে ওষুধ দিয়ে সমস্যা দূর করতে হবে। ডাঃ সাহা আরো জানান, কৃমির ওষুধ দেওয়ার সময় তার বয়স ও ওজনের কথা মাথায় রেখে ডোজ ঠিক করতে হয়। একবার ওষুধ দেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পরে আবার ওষুধ খেতে হয়। আর শুধু বাচ্চাদের নয়, একই সঙ্গে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও ওষুধ খেতে হয়।

কৃমির সমস্যা জীবন সংশয়ের সঙ্গে সরাসরি দায়ী না হলেও নানারকম সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই কৃমি সম্পর্কে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও সতর্ক থাকা দরকার। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার জন্য মূলত দায়ী স্ট্রিট ফুড এর অভ্যাস, ঠিক মতো রান্না করা খাবার না খাওয়া, বাইরে বেরিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ইত্যাদি। যদি এই সমস্যা আশপাশে প্রায়ই শোনা যায় তাহলে সবচেয়ে ভাল হয় বছরে একবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খাওয়া। অন্যথায় এই কৃমি দীর্ঘদিন শরীরে থাকার ফলে ফুসফুস ও  লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এমনকী নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কৃমি দূর করার বিষয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকটা সচেতন হলেও বয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সচেতনতা এসেছে তেমন বলা যায় না। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের অনেকেই এ ব্যাপারটা অবহেলা করেন। যা একেবারেই উচিত নয়। কিছু কৃমি সংক্রমণে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা গর্ভস্থ ভ্রূণের নানান সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অথচ কৃমির ওষুধ ঠিক সময় খেলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা জানান, হবু মায়েদের সময়মতো কৃমির ওষুধ দিলে প্রায় ১৪ শতাংশ সদ্যোজাতর মৃত্যুহার রোধ করা যায়।  এছাড়া সন্তানের কম ওজনের আশংকাও অনেক কমে যায়। তবে প্রথম ট্রাইমেস্টারে  এই ওষুধ দেওয়া চলবে না। দিতে হবে সেকেন্ড বা থার্ড ট্রাইমেস্টারে।  হু- এর মতে, সেকেন্ড বা থার্ড ট্রাইমেস্টারে অ্যালবেন্ডাজোল ৪০০ গ্রামের একটা ডোজ দেওয়া উচিত।  কিছু সাইড এফেক্টস হতে পারে। যেমন, বমি হওয়া বা বমিভাব। তবে জন্য মা কিংবা শিশুর ওপর কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে না।  তবে ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।