১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের তীব্র খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় উত্তর কোরিয়া! চালের দাম ঊর্ধমুখী, ভুট্টা খেয়ে দিন কাটছে আমজনতার

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২৩ জুন ২০২১, বুধবার
  • / 0


পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে উত্তর কোরিয়ায়। এমনই আশঙ্কায় দেশটি নেতা কিম জং উন। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম অত্যাধিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণ। এক কিলোগ্রাম ভুট্টার দাম গত ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১৩৭ ওয়ানে (প্রায় দুই মার্কিন ডলারের সমান)। এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ডেইলি এনকে ওয়েবসাইট থেকে, যারা উত্তর কোরিয়ায় তাদের বিভিন্ন সূত্র হতে এসব সংগ্রহ করে।
প্রধানত উত্তর কোরিয়ার মানুষের প্রিয় খাদ্য চাল। তার পরেও তারা ভুট্টা খেয়ে বেশি দিন কাটাচ্ছে। কারণ ভুট্টা দামের থেকে চালের দাম বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ২০২০২ সালের ডিসেম্বরের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বেনজামিন সিলবারস্টাইন জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার বাজার সমীক্ষা করে, মাধ্যমেই দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো তথ্য পাওয়া যায়, কারণ উত্তর কোরিয়ার মানুষ বাজারে গিয়ে লেন-দেনের মাধ্যমেই তাদের খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনে। সরকারি কর্মচারীদের একেবারে ক্ষুদ্র একটি অংশই কেবল রাষ্ট্রের কাছ থেকে খাদ্য সাহায্য পেয়ে থাকে। কারণ সরকার যা রেশন দেয়, তা পরিবারে জন্য যথেষ্ঠ নয়।
তবে উত্তর কোরিয়া নেতা কিম জং উন, খাদ্য সংকটের কারণ সম্পর্কে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলেছেন। ১৯৮১ সালের পর গত বছরের এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও টাইফুনের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে কোরিয়ান উপদ্বীপ। এর মধ্যে তিনটি টাইফুন দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপকূলে আঘাত করে। উত্তর কোরিয়ায় এই সময়টি ছিল ধান এবং ভুট্টার ফসল তোলার মৌসুম।
গত বছরের আগস্টের শুরুতে টাইফুন ‘হাগুপিট’ আঘাত আনে। তখন বলা হয়েছিল, বন্যায় ৪০ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে এবং ১৬ হাজার ৬৮০টি ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে।
১৯৯০ এর দশকে দেশটিতে যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তখন জ্বালানির জন্য ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করে গাছ কাটা হয়েছে। এরপর নিয়মিত বৃক্ষ রোপণ অভিযান চালানো হলেও, বনাঞ্চল উজাড় অব্যাহত রয়েছে, যা বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় ২৭ হাজার ৫শ হেক্টর বন উজাড় করা হয়েছে। ২০০১ সাল হতে এ পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমির গাছপালা। পাশাপাশি রয়েছে তীব্র সারের সংকট। উত্তর কোরিয়ার কৃষি খাতের অন্যতম সমস্যা সেখানে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট সার জোগাড় করার খুবই কঠিন। কারণ উত্তর কোরিয়া সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। দেশটির একটি প্রধান সার কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে।
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি আছে, তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য হয় একেবারেই সীমিত আকারে। আর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কারণে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য ত্রাণ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেয় চিন। কিন্তু কোভিডে কারণে চিন হতে উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য রফতানি ৮০ শতাংশ কমে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, গত দশকে দাতা দেশগুলো হতে উত্তর কোরিয়ায় যথেষ্ট ত্রাণ সাহায্য যায়নি

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ফের তীব্র খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় উত্তর কোরিয়া! চালের দাম ঊর্ধমুখী, ভুট্টা খেয়ে দিন কাটছে আমজনতার

আপডেট : ২৩ জুন ২০২১, বুধবার


পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে উত্তর কোরিয়ায়। এমনই আশঙ্কায় দেশটি নেতা কিম জং উন। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম অত্যাধিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণ। এক কিলোগ্রাম ভুট্টার দাম গত ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১৩৭ ওয়ানে (প্রায় দুই মার্কিন ডলারের সমান)। এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ডেইলি এনকে ওয়েবসাইট থেকে, যারা উত্তর কোরিয়ায় তাদের বিভিন্ন সূত্র হতে এসব সংগ্রহ করে।
প্রধানত উত্তর কোরিয়ার মানুষের প্রিয় খাদ্য চাল। তার পরেও তারা ভুট্টা খেয়ে বেশি দিন কাটাচ্ছে। কারণ ভুট্টা দামের থেকে চালের দাম বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ২০২০২ সালের ডিসেম্বরের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বেনজামিন সিলবারস্টাইন জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার বাজার সমীক্ষা করে, মাধ্যমেই দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো তথ্য পাওয়া যায়, কারণ উত্তর কোরিয়ার মানুষ বাজারে গিয়ে লেন-দেনের মাধ্যমেই তাদের খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনে। সরকারি কর্মচারীদের একেবারে ক্ষুদ্র একটি অংশই কেবল রাষ্ট্রের কাছ থেকে খাদ্য সাহায্য পেয়ে থাকে। কারণ সরকার যা রেশন দেয়, তা পরিবারে জন্য যথেষ্ঠ নয়।
তবে উত্তর কোরিয়া নেতা কিম জং উন, খাদ্য সংকটের কারণ সম্পর্কে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলেছেন। ১৯৮১ সালের পর গত বছরের এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও টাইফুনের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে কোরিয়ান উপদ্বীপ। এর মধ্যে তিনটি টাইফুন দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপকূলে আঘাত করে। উত্তর কোরিয়ায় এই সময়টি ছিল ধান এবং ভুট্টার ফসল তোলার মৌসুম।
গত বছরের আগস্টের শুরুতে টাইফুন ‘হাগুপিট’ আঘাত আনে। তখন বলা হয়েছিল, বন্যায় ৪০ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে এবং ১৬ হাজার ৬৮০টি ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে।
১৯৯০ এর দশকে দেশটিতে যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তখন জ্বালানির জন্য ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করে গাছ কাটা হয়েছে। এরপর নিয়মিত বৃক্ষ রোপণ অভিযান চালানো হলেও, বনাঞ্চল উজাড় অব্যাহত রয়েছে, যা বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় ২৭ হাজার ৫শ হেক্টর বন উজাড় করা হয়েছে। ২০০১ সাল হতে এ পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমির গাছপালা। পাশাপাশি রয়েছে তীব্র সারের সংকট। উত্তর কোরিয়ার কৃষি খাতের অন্যতম সমস্যা সেখানে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট সার জোগাড় করার খুবই কঠিন। কারণ উত্তর কোরিয়া সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। দেশটির একটি প্রধান সার কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে।
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি আছে, তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য হয় একেবারেই সীমিত আকারে। আর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কারণে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য ত্রাণ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেয় চিন। কিন্তু কোভিডে কারণে চিন হতে উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য রফতানি ৮০ শতাংশ কমে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, গত দশকে দাতা দেশগুলো হতে উত্তর কোরিয়ায় যথেষ্ট ত্রাণ সাহায্য যায়নি