স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে সরকার, নারায়ণা হাসপাতালের শিলান্যাসে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
- আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 0
১০ হাজার জনের কর্মসংস্থান
পুবের কলম প্রতিবেদক: বাংলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে তৃণমূল সরকার। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রাজ্যের হাসপাতালগুলি করুণ অবস্থায় ছিল। চোদ্দ বছরে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। বহু জটিল অপারেশন হচ্ছে। একদিকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে উন্নতমানের চিকিৎসা হচ্ছে। অন্যদিকে, একাধিক বেসরকারি হাসপাতালও তাদের ডেস্টিনেশন করে তুলছে এই রাজ্যকে। বৃহস্পতিবার নিউ টাউনে নারায়ণা হেলথ সিটির শিলান্যাস করে সেই মঞ্চেই রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে আমাদের সরকার। সেইসঙ্গে নারায়ণা হাসপাতালে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অন্তত ১০ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, এই রাজ্যে সব ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধার পরিবেশ রয়েছে। বাংলায় সব ধর্মের মানুষ একে অপরের সুখে দুঃখে শামিল হয়।
উল্লেখ্য, গতবছরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে নায়ারণা হেলথ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দেবীপ্রসাদ শেঠী তাঁদের সংস্থার পক্ষ থেকে পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এই রাজ্যে স্থাপনের জন্য প্রস্তাব রেখেছিলেন। তাঁর এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার নিউ টাউনে কনভেনশন সেন্টারের কাছে ৭.২৬ একর জমি দিয়েছে। সেই জমিতেই ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১১০০ বেডের অত্যাধুনিক হাসপাতালটি তৈরি করতে চলেছে নারায়ণা হেলথ গোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালের শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, আধুনিক যুগের দাবি মেনে ক্যানসার চিকিৎসা, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এমনকী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ থাকবে এখানে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে প্রদীপ জ্বালিয়ে হাসপাতালে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দেবী শেঠী বলেন, ‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’ কথাটি আক্ষরিক অর্থেই শেঠী। গতবছরে তিনি প্রস্তাব রেখেছিলেন এই রাজ্যে হাসপাতাল স্থাপনার জন্য। তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে জমি দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী ৬ মাসের কাজ শুরুর ছাড়পত্র-সহ সবরকম সহযোগিতা পেয়ে যান তিনি। যেখানে অন্য রাজ্যে এক বছরেরও বেশি সময় লাগে। ™ঁচিশ বছর আগে মুকু¨পুরে তিনি হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। নতুন হাসপাতালটি তাঁদের পঞ্চম উদ্যোগ। এ দিন তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর লক্ষ্য সমাজের দারিo্যসীমার নীচে থাকা মানুষদের উন্নতমানের চিকিৎসার পরিষেবা দান। বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার উত্তর হয়ে উঠতে পারে এই নতুন নারায়ণা হাসপাতাল।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রথমেই বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই প্রকল্প ‘ইউনিভার্সাল’। কোনও রকম শর্ত ছাড়াই যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্যের ৯ কোটি মানুষ সুবিধে পান। শিশুসাথী’ প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৩২ হাজার শিশুর বিনামূল্যে অপারেশন হয়েছে। ‘চোখের আলোয়’ প্রকল্পে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষে বিনামূল্যে চক্ষুপরীক্ষা, প্রায় সাড়ে ২০ লক্ষ মানুষের ছানি অপারেশন এবং ২৮ লক্ষ মানুষকে চশমা দেওয়া হয়েছে। মমতার কথায় এই নজির দেশের কোথাও নেই। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য এখনও পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি টাকা এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে। হাসপাতালগুলির জন্য আরও ২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
মমতা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রাজ্যে ১২টি মেডিক্যাল কলেজ ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। ৪২টি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। আগে জেলায় কোনও কোনও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ছিল না। এখন জেলা হাসপাতালেও ৭৬টির মতো ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট খোলা হয়েছে। শিশুদের জন্য এসএনসিএউ ছিল মাত্র ৫টি। তৃণমূল সরকারের আমলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬টি। গ্রামে ১৩,৩৯২টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ১৮৭টি ফেয়ার প্রাইস ডায়াগোনাস্টিক সেন্টার খোলা হয়েছে। খোলা হয়েছে ১১৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১৩টি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৯ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এইসব পরিসংখ্যান শুনে এ দিন বার বার হাততালি পড়েছে।
সম্প্রতি ধর্মের জিগির তুলে রাজ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরির জন্য এ দিন বিরোধীদের নাম না করে মমতা বলেন, কেউ কেউ হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান শিখ নিয়ে ভাগাভাগি করে। কিন্তু আমাদের সরকার এবং আমি কোনও ভেদাভেদ করি না। সকলের জন্য পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি নেওয়ার সময় পুরোহিত, ইমাম, মুয়াজ্জিন সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সব মানুষকে এতে রাজি করিয়েছিলাম। এটাই আমাদের বাংলা।