ইসলাম: শান্তির পয়গাম
- আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার
- / 0
মাহমুদ হাসান ফাহিমঃ ইসলাম অর্থ মুক্তি ও শান্তি। মানবজাতির ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির চিরসত্য পয়গাম, যা বিশ্বের সব মানুষের জন্য সমানভাবে অনুকরণীয় জীবনাদর্শ। ইসলামই কেবল-ই সত্যধর্ম, যা সবার শান্তির নিশ্চয়তা দেয়। এর বিধান প্রতিষ্ঠিত হলে অমুসলিমরাও লাভ করে শান্তি ফল্গুধারার। অন্য কোনও ইজম, অমূলক ধর্ম বা বিকৃত দ্বীন কারও শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে না; পারবেও না। শুধু দাবি পর্যন্তই শেষ।
যে ধর্ম ভিত্তিহীন অথবা বিকৃত, যার শরীয়ত মানবরচিত, এর অনুসারীরা যা ইচ্ছা করতে পারে, বলতে পারে। কিন্তু যার ধর্ম সত্য, সুসংরক্ষিত ও স্থায়ী। আছে এমন স্থায়ী শরীয়ত, যার উৎস ওহীর জ্ঞান (পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ) সুসংরক্ষিত এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে; অবশ্যই সে-ই হবে চির সফল।
আল্লাহ্তাআলা ইসলামকে সব দিক দিয়ে পূর্ণতা দান করেছেন। এর অনুসারীদেরকে অন্যের মুখাপেক্ষী করে ছেড়ে দেননি যে, শান্তির জন্য তাদেরকে অন্যের আশ্রয় নিতে হবে। ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ও পরিপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, আর পরিপূর্ণ করলাম আমার নিয়ামত এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সুতরাং একে পূর্ণরূপে পালন করো)।’ (সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৩)
পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় ‘ইসলাম, সালাম’ ইত্যাদি শধ ব্যবহৃত হয়েছে, প্রায় সবগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল- মুক্তি ও শান্তি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় তিনি এর দ্বারা তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ ইচ্ছায় তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তাদেরকে দেখান সরল পথ।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ১৫-১৬)
অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির পয়গাম নিয়ে ধরাপৃষ্ঠে ইসলামের আগমন। বিশ্ববাসীর জীবন থেকে চিরকালের জন্য অশান্তিকে বিদায় জানাতে যার আগমন তাতে একমুহূর্তে জন্যও নেই অশান্তির সমর্থন! পবিত্র কুরআনে ভাষায়, আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘যখন সে (কলহপ্রিয় মানুষ) প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু ধ্বংসের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ্ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২০৫)
অন্য আয়াতে এসেছে : ‘যমীনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আর আল্লাহকে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের খুবই নিকটবর্তী।’ (সূরা আরাফ , আয়াত : ৫৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন, যেসব কর্মকাণ্ড পৃথিবীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেগুলো করতে আল্লাহ্তায়ালা নিষেধ করেছেন। কেননা, শান্ত পরিবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে, তা বান্দাহ্দের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা জমিনে ফাসাদ (অশান্তি) সৃষ্টি করো না।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১১)
এর ব্যাখ্যায় হজরত আবুল আলীয়া রহ. বলেন, ‘ফাসাদ সৃষ্টি করো না’ অর্থাৎ জমিনে আল্লাহ্র অবাধ্য হয়ো না। মুনাফিকদের ফাসাদ সৃষ্টির অর্থই হচ্ছে, জমিনের বুকে আল্লাহ্র নাফরমানী ও অবাধ্যতা অবলম্বন। কেননা, যে কেউ জমিনে আল্লাহর অবাধ্য হবে, অথবা অবাধ্যতার নির্দেশ দিবে সেই হবে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। কারণ, আসমান ও জমিন একমাত্র আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত থাকে। (আত তাফসীরুস সহিহ্)
ইসলাম বাস্তব অর্থেই শান্তির ধর্ম। মানবরচিত শান্তি নয়, বরং দুনিয়া ও আখেরাতের চূড়ান্ত শান্তির পয়গাম। তাই পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হয়ে ইসলামের অনুশীলন করার কথা বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। যারা নামমাত্র মুসলিম কিন্তু ইসলাম অনুশীলনের ধারে কাছেও নেই, এই ইসলাম তাদেরকে কীভাবে শান্তির পয়গাম শোনাবে! ইরশাদ হয়েছে : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত : ২০৮)
মানবরচিত শান্তিকে আসল শান্তি মনে করে যারা ইসলাম কবুল করেনি কিংবা ইসলাম কবুল করার পরও বিজাতীয় কৃষ্টি কালচারের অনুসরণ ও অনুশীলন করেছে যারা পরকালে তারাই হবে মহা ক্ষতিগ্রস্ত, একথাও বলে দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে : ‘যেই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও দ্বীন গ্রহণ করবে তার থেকে তা কখনও কবুল করা হবে না। আর সে হবে আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)