তালিকায় ভুতুড়ে ভোটার নজরদারিতে কমিটি গড়লেন মমতা
- আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 0
পুবের কলম প্রতিবেদক: ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে এই মুূহূর্তে তৃণমূলের কাজে বড় চ্যালেঞ্জ ভুতুড়ে ভোটার ধরা। যা আসলে প্রস্তুতিপর্বের প্রথম পাঠ। বৃহস্পতিবারের দলীয় সাংগঠনিক সভায় এই বিষয়টি নিয়ে ছাব্বিশের জয়ের সুর বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মেগা সভা থেকে ভুতুড়ে ভোটার তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেন মমতা। ভোটার তালিকার নজরদারিতে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ৩৬ জন নেতা নেত্রীকে নিয়ে এদিন গড়ে দিলেন কোর কমিটি। এই কোর কমিটির জন্য দশ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দেন নেত্রী। বলেন, রাজ্য কমিটির পাশাপাশি জেলাতেও গড়া হবে কোর কমিটি। তিন দিন পরপর রাজ্য কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। কোথাও বাধা পেলে তা জানাতে হবে তৃণমূল ভবনে। মমতা এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছাব্বিশের ভোটের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হল ভুতুড়ে ভোটারদের বিদেয় করা।
মমতা অভিযোগ করেন, একাধিক সংস্থাকে দিয়ে ডেটা অপারেটরদের মাধ্যমে ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর কাজ করা হচ্ছে। বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে, সেজন্য একই নম্বরের এপিক কার্ডের ভিনরাজ্যের বাসিন্দাদের অনলাইনের মাধ্যমে নাম তোলা হচ্ছে বলে প্রমাণ তুলে ধরেন মমতা। বাংলার ভোটারের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে হরিয়ানা, গুজরাত, পাঞ্জাবের ভোটারের নাম। মমতা এদিন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ডেটা অপারেটরদের ওপর নজর রাখুন। ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন ছাড়া ভোটার লিস্টে নাম যেন না ঢোকে সেজন্য দলের নেতৃত্বদের সজাগ থাকতে হবে। মমতার ভাষায়, ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করার জন্য যে কমিটি গড়ে দিলেন মমতা, সেখানে মোটামুটি সব জেলারই নেতৃত্ব থাকছে। এই কমিটিতে থাকছেন অভিষেক ব¨্যােপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অরূপ বিশ্বাস, মালা রায়, দেবাংশু ভট্টাচার্য, বীরবাহা হাঁসদা, সায়নী ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, সব্যসাচী দত্ত, সুজিত বসু, মলয় ঘটক, ডেরেক ও ব্রায়েন, উদয়ন গুহ, বিপ্লব মিত্র, মমতাবালা ঠাকুর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়া, বাপি হালদার, নির্মলচন্দ্র রায়, সুমন কাঞ্জিলাল, অর্পিতা ঘোষ, সামিরুল ইসলাম, পুলক রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মোশারফ হোসেন, প্রকাশ টিক বরাইক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্না, মানস ভুঁইয়্যা।
এই কোর কমিটিতে বীরভূম জেলার কাউকে রাখা হয়নি। তাহলে কেষ্টর গড়ে কোনও ভুতুড়ে ভোটার নেই? ব্যাখ্যাটা দিলেন নেত্রী নিজেই। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রথম সারিতে বসে থাকা অনুব্রত তথা কেষ্টকে আদেশের সুরেই বললেন, কেষ্ট কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। স্পষ্ট নাম করে বলে দেন, কাজলকে (শেখ) কনফিডেন্সে নিতে হবে। আশিসদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং শতাধী রায়কেও ডেকে নিতে হবে। সবাই মিলে কাজ করবে। মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকায় ভুতুড়ে ভোটারের অভিযোগ বেশি এসেছে। এই জেলাটি আবার বীরভূমের সাংগঠনিক এলাকার অন্তর্গত। নওদার বিধায়ককে এদিন মমতা বলেন, সীমান্ত এলাকা কেষ্ট দেখবে। বুথ কমিটি গড়ে কাজ করা হবে।
ভোটার তালিকা কারচুপি ধরতে হলে মানুষের বাড়ি বাড়ি দিয়ে জনসংযোগ করার ওপর গুরুত্ব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির ওপরেও জোর দিলেন। এই ক্ষেত্রে মমতার সাফ বার্তা যারা ভালো কাজ করবেন , তাঁদের পদোন্নতি হবে। আর যাঁরা কাজ না করে ভাষণ-বিবৃতি দেবেন, বিজেপির সঙ্গে মাঠে নেমে লড়াই করবেন না, তাদের রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা। এদিন নেতাজির ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় বক্তব্য রাখেন ইউসুফ পাঠান, সাগরিকা ঘোষ, শতাধী রায় এবং কীর্তি আজাদ। সকলেই এদিন তৃণমূলের কর্মীদের নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য উজ্জীবিত করেন।
এদিন তৃণমূল নেত্রী পরিষ্কার বলে দেন, আই প্যাকের সমালোচনা বন্ধ করুন। এটা প্রশান্ত কিশোরের আই প্যাক নয় বলেও জানিয়ে দিলেন নেত্রী। ওরা অন্য রাজনৈতিক দলও করেছে। এটা নতুন টিম এদের সঙ্গে সহযোগিতার করতে হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মমতা। তিনি এদিন বলেন, বিজেপির ৫০ টা এজেন্সি রয়েছে। আমাদের তো অন্তত একটা থাকবে। তারাই ফিল্ড সার্ভে করবে। নতুন আই প্যাকের নামে উল্টোপাল্টা করা বলা বন্ধ করতে হবে বলে সাবধান করে দেন নেত্রী। বেশ কিছুদিন ধরেই দল অস্বস্তিতে পড়ে এমন মন্তব্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন মমতা। ছাব্বিশের ভোটের আগে নিজের ঘর গোছাতে সব দিক থেকেই কড়াকরি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।