মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি না থাকায় ক্ষুব্ধ জেলাবাসী
- আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, রবিবার
- / 0
রাবিয়া বেগম, বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পঠন-পঠান শুরু হচ্ছে। কোন বিষয়ে কতটা আসন বরাদ্দ করেছেন ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিজ্ঞপ্তিও সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ১৪টি বিষয়ের মধ্যে সর্বাধিক আসন বরাদ্দ করা হয়েছে সংস্কতের জন্য। অর্থাৎ ৮০টা আসনে সংস্কৃত বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ানো হবে। দেবভাষা বলে কথিত সংস্কৃত ভাষাকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুজাতা ভারতের এই গৌরবকে মুর্শিদাবাদে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তার জন্য তিনি অবশ্যই, ধন্যবাদের পাত্রী। কালিদাস, ভবভূতি প্রভৃতি মহাকবির কাব্যাবলি আমাদেরকে বিভিন্ন অনুবাদের মাধ্যমে পড়তে হয়। ফলে আসরের আস্বাদন থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এ ছাড়াও গৌরবময় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃত, সাহিত্য, জীবনাচার প্রভৃতি জানার জন্য সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন করা একান্তই জরুরি। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি উপলব্ধি করে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আর সেই জন্যই তিনি সবার উপরে সংস্কৃত ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এ দিকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪০টি আসন, এ রাজ্যের ভাষা বাংলার জন্য ৬০টি আসনের অনুমতি পেয়েছে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়।কিন্তু কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, ইংরেজির মতো আন্তর্জাতিক ভাষার জন্য ৪০টি আসন, আর এই রাজ্যের মাতৃভাষার জন্য ৬০টি আসন বরাদ্দ কেন করা হল? সংস্কৃতের মতোই সারারাজ্যে, দেশে এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ইংরেজিরও চাহিদা রয়েছে।
২০১১ সালের সেনসাস অনুযায়ী, সমগ্র ভারতে ০.০০১৯৮ শতাংশ মানুষ সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেন বলে দাবি করেছেন। কাজেই সংস্কৃত ভাষাভাষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা একটি জাতীয় কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, ১৯৪৮ সালে গঠিত ইসরাইল রাষ্ট্রে তাদের ধর্মীয় ভাষা হিব্র& বলার মতো লোক খুব একটা ছিল না বললেই চলে। ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু জায়ানবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল হিব্র& ভাষার পঠন-পাঠন এবং প্রচলনের জন্য যেসব উদ্যোগ নেয় তাতে এই ভাষাটি বিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচে গেছে। হয়তো ইসরাইলের উদাহরণও সুজাতাদেবীর সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করেছে। যাই হোক, অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য কম আসন বরাদ্দ করায় কিছু লোক প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, মুর্শিদাবাদকে অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক ও শিক্ষাগতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সায়েন্সের সঙ্গে কলা ও বাণিজ্যিক বিভাগেও পঠন-পাঠনে জোর দিতে হবে। এ দিকে অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএড প্রভৃতি কলেজ বাদ দিলে মুর্শিদাবাদে সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত মোট ২৫টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে আরবি পড়ানো হয় ১৪টি কলেজে। অন্যদিকে, সংস্কৃত পড়ানো হয় মুর্শিদাবাদের ১৪টি কলেজে। দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আরবির জন্য একটিও স্নাতকোত্তর আসন বরাদ্দ করেনি। অথচ আরবি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা– জীবন্ত ভাষা। শুধু ভারত নয়, সারাবিশ্বে ভাষা হিসেবে আরবির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। সেখানে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন আরবির জন্য ৫-১০টি আসনও বরাদ্দ করলেন না, তা রীতিমতো রহস্যময়।
উপাচার্য সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এখনও আরবিতে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। যে বিষয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে সেগুলিতেই নির্দিষ্ট ছাত্রছাত্রী সহ পঠন-পাঠন চালু করা হচ্ছে। আগামী বছর আরবি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারলে ওই বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি ও পঠন-পাঠন চালু করা হবে। বহরমপুরের একজন বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কয় বছর মেয়াদের জন্য উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে তার কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ বিষয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিষয়ে কত আসন, কোন বিষয়ে পড়াশোনা হবে সবই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাহিদা পাঠায়। সেই চাহিদা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা দফতর তা অনুমোদন করে থাকে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ২৫টি কলেজের মধ্যে ১৪টি কলেজে সংস্কৃত অনার্স পড়ানো হয়। শিক্ষা দফতর সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেশিরভাগ কলেজে সংস্টৃñত অনার্সে আসন সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টি। স্বভাবত ১৪টি কলেজে বছরে সাতশো মতো ছাত্রছাত্রী সংস্কৃত অনার্স পাশ করলে স্নাতকোত্তর আসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে অনার্স করলে সবাই এমএ করে না। আর মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় প্রতিটি কলেজে বাংলা অনার্স পড়ানো হয়। তাছাড়া বাংলায় আসন সংখ্যাও অনেক বেশি। ইংরেজিতেও একইরকম অবস্থা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ খুরশিদ আলম মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলেন, মুর্শিদাবাদবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হল বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ায়। যতটা খুশি হওয়ার কথা ততটাই বিস্মিত জেলাবাসী। ইংরেজির মতো বিষয়ে ৪০টি আসন আর সংস্কৃত বিষয়ে ৮০টি আসন অনুমোদন হওয়ায় অনেকেই অবাক। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজের সংস্টৃñত বিভাগ খুবই ঐতিহ্যপূর্ণ। সেই হিসেবে সংস্কৃত আসন ৮০টি হয়েছে হোক। তাহলে বাংলা বা ইংরেজির মতো বিষয়ে ৮০ বা তার বেশি আসন হলে সমালোচনার উর্ধ্বে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনজন আরবি শিক্ষাবিদ শুক্রবার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদেরকে শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন।