বিশ্বভারতী অধ্যাপকের “শূন্যে মেঘগানম” পেল সাহিত্য অ্যাকাডেমি

- আপডেট : ১ জানুয়ারী ২০২৪, সোমবার
- / 1
দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: উত্তর আধুনিক যুগে সম্পর্কের বিপর্যয় নিয়ে দেবনাগরিতে সংস্কৃত লেখা “শূন্যে মেঘগানম” বইটি তেইশ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেল। একুশ সালে প্রকাশিত এই বইটির জন্য কবি অরুণ রঞ্জন মিশ্রর হাতে চব্বিশ সালের বারো মার্চ কোপারনিকাস মার্গে অ্যাকাডেমি পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। বিশ্বভারতীর জন সংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অরুণ রঞ্জন মিশ্রর এই সাহিত্য একাডেমি এ্যাওয়ার্ডে গোটা বিশ্বভারতী গর্বিত।
উনষট্টিটি কবিতা এই কাব্যে স্থান পেয়েছে। মানবিক বিভিন্ন সম্পর্কের ভাবের বিপর্যয় তুলে ধরা হয়েছে এই কাব্যে। বিরহ ও একাকিত্ব তার পৃষ্ঠভূমি। তিনি বলেন, “ভারতীয় শাস্ত্রে শৃঙ্গার দুই প্রকার। নারী পুরুষের সম্ভোগ শৃঙ্গারকে প্রাধান্য না দিয়ে মুখ্যরস বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গারকে কবি প্রাধান্য দিয়েছেন। মহাকবি কালিদাসের মেঘ দূতমে বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গার দেখা যায়। আবার কুমার সম্ভবে এই সম্ভোগ শৃঙ্গার দেখা যায়।
কাব্যটি মুক্ত ছন্দে লিখিত।” কবি জানান, উনষট্টি কবিতা লেখার কারণ, তাঁর জন্ম উনিশশো উনষাট সালে বলে নয়। পাঁচ জ্ঞানের প্রতীক এবং নয় ভাগ্যের প্রতীক। উভয়কে মিলিয়ে এই কাব্য। তাঁর প্রথম সংকলন চৌঁষট্টিটা ছিল। তার পরে সবগুলো উনষাটটি কবিতার সংকলন। আঠারো সালে “তব জবাধর মন্ময়রেখাসু” চৌঁষট্টিটা স্তবকে লিখিত। যথাক্রমে উনিশ সালে বের হয় “নেত্র প্রান্তে নিস্পন্দ সময়:”। একুশ সালে প্রকাশিত হয় “শূন্যে মেঘগানম”। অতিমারি করোনা নিয়ে তেইশ সালে বের হয়েছে একশো পনেরো স্তবকের “করোনা কম্প শতকম”।
অরুণ রঞ্জন মিশ্র জানান, উজ্জয়িনী সম্রাট ভর্তহরির অন্যতম লেখা “শৃঙ্গার শতকম”। সেদিক থেকে “করোনা কম্প শতকম” তাঁর প্রথম লেখা কাব্য। “কজ্জ্বল সূর্য” সহ আরেকটি বই প্রকাশের অপেক্ষায়, বলে তিনি জানান। অরুণ মিশ্র বলেন, আঠারো ডিসেম্বরে তাঁকে ফোনে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথা জানান। বিশ্বভারতীর ভাষা ভবনের সংস্কৃত, প্রাকৃত এবং পালি ভাষা বিভাগের সংস্কৃত শিক্ষক অরুণ রঞ্জন মিশ্র। দুই হাজার আট সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন তিনি। উনার মাতামহ জয়কৃষ্ণ মিশ্র সংস্কৃত কবি ছিলেন। তাঁর সাতশো চব্বিশ পৃষ্ঠার চম্পু মহাকাব্য উড়িষ্যা সাহিত্য একাডেমি প্রকাশ করে। অরুণ রঞ্জন মিশ্রের বাবা লক্ষ্মীন্দর মিশ্র কটক আকাশ বাণীর পুরাতন গীতিকার ছিলেন। তাঁর বর্তমান বয়স তিরানব্বই।
গত বছর তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি ওড়িয়া ভাষায় তিনশো পঞ্চাশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনুবাদ করেন। অরুণ মিশ্রের জ্যেঠু কুলমনি মিশ্র অর্থ শাস্ত্রের পণ্ডিত এবং কবি ছিলেন। কাকু প্রমোদ চন্দ্র মিশ্র ছিলেন পণ্ডিত মানুষ। ওড়িয়া ভাষায় অরুণ মিশ্রর আট খানি কবিতার বই আছে। দুটি ছোট গল্প এবং অন্যান্য পুস্তক আছে।
অরুণ মিশ্র বলেন, বিশ্বভারতীতে আসার আগে প্রায় উনিশ বছর উড়িষ্যায় অন্যান্য সরকারি কলেজে ছিলাম। পরিবারে আট ভাইবোন আছেন। উড়িষ্যার বহরমপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর তাঁর স্ত্রী। তাঁর দুই মেয়ে হায়দরাবাদে চাকরি করেন।
অরুণ রঞ্জন মিশ্র বলেন, সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পাওয়ার খবরে পরিবারের সবাই খুশি। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছি। যে কোনো ভাষার বই সেই রাজ্যের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু সংস্কৃত এবং হিন্দি বই সারা ভারত জুড়ে প্রতিযোগিতা হয়। তিনশো চারশো বই চারটি ধাপে স্ক্রুটিনির মধ্য দিয়ে যায়। তারপর দশটি বই থেকে একটি বই এই পুরস্কার পায়। সেকারণে আমি আশ্চর্য হই। ওড়িয়ায় আটটি কবিতা বই ছাড়াও অন্য বই লিখেছি। বিশ্বভারতীতে এসে সংস্কৃত বই লিখি। সেটা সংখ্যায় মাত্র তিন। তাই অবাক হয়েছিলাম।