১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম গ্রন্থটি বাঙালি জাতির উত্থানে সুদূরপ্রসারী ইতিহাস

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, শনিবার
  • / 0

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম: গ্রন্থটি বাঙালি জাতির উত্থানে সুদূরপ্রসারী ইতিহাসের এক মূল্যায়িত দর্পন, যা ইতিহাস আশ্রিত। ঐতিহাসিকের মতে আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তার সবটাই ইতিহাস নয়, বরং ইতিহাস হলো ঘটে যাওয়া ঘটনার গ্রহণবর্জন। যেখানে ঘটনা ইতিহাসের পরিকল্পনায় গড়ে ওঠে। একালের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষা, আচার আচরণ, চিন্তাভাবনা ও প্রত্যাশাপ্রাপ্তির মেলবন্ধন অতীত ইতিহাসকে প্রযুক্ত করে সে কারণে ইতিহাস হচ্ছে একই সঙ্গে সেকালের এবং একালের। যদি তা-না হতো তাহলে ইতিহাস নির্মোহ ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারত না। প্রাচীন বিশ্বে গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস গল্প বলার আঙ্গিকে অতীতকে উন্মোচন করেছেন। সে কারণে তাঁকে ইতিহাস রচনার দ্বারোদঘাটক বলা হয়। পরবর্তীতে ইতিহাস রচনাকে বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলায় এনে একটি সুস্পষ্ট কাঠামোতে রূপ দেন গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডিস। গ্রিসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রাচীন রোমেও ইতিহাস চর্চা অব্যাহত থাকে। এর পর প্রথাগত ইতিহাস চর্চায় গৌরবময় অধ্যায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে মধ্যযুগ পর্যন্ত।

book Struggle, Bengalis , far-reaching history, Bengali nation

মধ্যযুগে ইতিহাস চর্চার মধ্যমণি হয়ে অবতীর্ণ হন মুসলমান ঐতিহাসিকগণ। তাঁদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রণোদনা ছিল ইতিহাস রচনার পক্ষে। রাজ্য বিজয়ের পাশাপাশি বিজয়ের গৌরবগাঁথা তুলে ধরতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হত। এভাবে মুসলিম শাসিত অঞ্চলগুলোতে ইতিহাস চর্চার উজ্জ্বল ধারা অব্যাহত ছিল। এরই সূত্রে দেখা যায় ইতিহাস পঠনপাঠন ও পুনর্গঠনের চর্চায় মধ্যযুগের হুসেন শাহী বংশের অবদান তুলনারহিত। এ সময় থেকে বাঙালি জাতি নিজেদের উত্থানে একটি নির্দিষ্ট রূপ পায়। এই শাহী শাসকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে বাংলা সাহিত্যের বিকাশসহ শিল্পসংস্কৃতির প্রসার ঘটানো। এরই ফল স্বরূপ ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৌহাদ্য ও সম্প্রীতি অটুট থেকেছে। ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’ গ্রন্থের ভূমিকাংশে তারই একটি চমৎকার উপস্থাপনা বিম্বিত হয়েছে। গ্রন্থটির ভূমিকা ও সম্পাদকীয় বক্তব্যের নির্যাসে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, ১৯৪৭ সালের ধর্মীয় বিভিন্নতার প্রশ্নে দেশবিভক্তি, ভারত পাকিস্তান নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রগঠন পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্যের অসারতা প্রমাণ, ভাষাভিত্তিক জাতিগঠনের সংগ্রাম, পরবর্তী পঁচিশ বছরের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্ভব প্রভৃতি বিষয়ক বিদগ্ধ আলোচনা ও পর্যালোচনা একান্তই প্রশংসার যোগ্য।

ইতিহাস বিষয়ক এই গ্রন্থটি গবেষণা, বিদ্যাবত্তা ও পাণ্ডিত্যের এক অনন্য সাধারণ নিদর্শন। বাঙালি জাতির ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, ধর্মদর্শন, ভাবসাধনা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিপ্রায় স্বতঃপ্রণোদিত আবেদনে বিম্বিত হয়েছে। গ্রন্থে চব্বিশ জন বিদগ্ধ ও প্রথিতযশা লেখকের ২৯ টি প্রবন্ধে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ভাবনা গভীরতর আবেদন নিরূপণে বৈপ্লবিকতা অর্জিত হয়েছে। বাংলা, বাঙালি ও বাঙালিত্বকে পুর্ণাবয়ব প্রতিকৃতির চেহারায় নিরূপিত করার আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রন্থটিতে বিম্বিত হয়েছে।

দৈশিক, কালিক, নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শৈক্ষিক ও আর্থিক অবস্থানের চিন্তাচেতনা অনুভবের রূপ ও স্বরূপে জানবার ও বুঝবার প্রাসঙ্গিকতা আলেখ্য হিসেবে বিবেচ্য। জীবন ও জীবন চেতনায় উচ্চারিত, উদ্ভাসিত ও লিপিকৃত লঘুগুর রূপ বাস্তবতার নিরিখে জীবনালেখ্য হিসেবে উৎসারিত হয়েছে। বিশেষত গ্রন্থের অভ্যন্তরীণ ২৯ টি প্রবন্ধের শিরোনাম কৌতূহলী জিজ্ঞাসাকে যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে নিবৃত্তিকরণে তত্ত্ব ও তাৎপর্যে প্রাজ্ঞতা পেয়েছে।

ইতিহাসের সূত্রে শিরোনামগুলোর বিচার বিশ্লেষণ কালোপযোগী রূপে তত্ত্বের লাবণ্যে ঋদ্ধ করেছে। ইতিহাসকে তথ্যের স্বাস্থ্যে, বক্তব্যে ও বিন্যাসে উৎকর্ষতা বিধান করেছে। দেশকালের পটে ও প্রয়োজনীয় আবেদন নিবেদনসহ বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য টীকাভাষ্যে জীবনঘনিষ্ঠ রূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আন্তরিকতার সাথে অনুপ্রাণিত করে। বাঙালি তার দোষগুণ, লজ্জাগৌরব ও মন মননের বিম্বিত রূপ দেখতে পায় ইতিহাসের আয়নায়। এ আয়নায় আরও দেখতে পায় দেশকাল ও জাতির প্রতিকৃতি। গ্রন্থটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পঠনপাঠনে এমন প্রতিবিম্ব সহজেই অনুধাবনীয় হয়ে ওঠে। ফলে বাংলা, বাঙালি ও বাঙালি জাতির অস্তিত্বের চিত্রণ অনায়াসলব্ধ প্রীতির সূত্রে প্রান্তপর্বকে স্পর্শ করে। যা লেখকগণের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধাবী আলোচনার মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর জীবনে নবজীবন উল্লম্ফিত হতে চায়। আর এমন একটি কালজয়ী মহৎ কাজ করার জন্য সাহসী সৈনিক হিসেবে গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশন সংস্থার সম্পাদক ফারুক আহমেদ একক কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ নিরলস প্রচেষ্টার কারণে এমন একটি কালস্পর্শী গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে।

এছাড়াও গ্রন্থটির নজরকাড়া প্রচ্ছদ, মানসম্মত ও ঝকঝকে মুদ্রণ এবং বাঁধাই গ্রন্থটিকে নান্দনিকতা বৃদ্ধি করেছে। যা অধিক তাৎপর্যে আকর্ষণীয় মাত্রায় সমুজ্জ্বল হতে পেরেছে। বাঙালির জাতিসত্ত্বা ও বাঙালিত্ব নিয়ে যখন নানা সংশয় প্রকট থেকে প্রকটতর রূপ নিতে চায়। তখন ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসা’র মতই এই শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করে সম্পাদক ফারুক আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতির কাণ্ডারি হিসেবে সমস্যার সমাধান ও তার উত্তরণে এগিয়ে এসেছেন। সেইসঙ্গে গ্রন্থের বিক্রয়লব্ধ অর্থ দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রসারের জন্য ব্যয় করার ঘোষণাটি অধিকতর স্বতন্ত্রমাত্রা এনে দিয়েছে। এমন একটি ভালো কাজ করে তিনি জাতিকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সঙ্গত কারণে আমি বইটির প্রচার ও প্রসার কামনা করি।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম গ্রন্থটি বাঙালি জাতির উত্থানে সুদূরপ্রসারী ইতিহাস

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, শনিবার

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম: গ্রন্থটি বাঙালি জাতির উত্থানে সুদূরপ্রসারী ইতিহাসের এক মূল্যায়িত দর্পন, যা ইতিহাস আশ্রিত। ঐতিহাসিকের মতে আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তার সবটাই ইতিহাস নয়, বরং ইতিহাস হলো ঘটে যাওয়া ঘটনার গ্রহণবর্জন। যেখানে ঘটনা ইতিহাসের পরিকল্পনায় গড়ে ওঠে। একালের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষা, আচার আচরণ, চিন্তাভাবনা ও প্রত্যাশাপ্রাপ্তির মেলবন্ধন অতীত ইতিহাসকে প্রযুক্ত করে সে কারণে ইতিহাস হচ্ছে একই সঙ্গে সেকালের এবং একালের। যদি তা-না হতো তাহলে ইতিহাস নির্মোহ ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারত না। প্রাচীন বিশ্বে গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস গল্প বলার আঙ্গিকে অতীতকে উন্মোচন করেছেন। সে কারণে তাঁকে ইতিহাস রচনার দ্বারোদঘাটক বলা হয়। পরবর্তীতে ইতিহাস রচনাকে বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলায় এনে একটি সুস্পষ্ট কাঠামোতে রূপ দেন গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডিস। গ্রিসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রাচীন রোমেও ইতিহাস চর্চা অব্যাহত থাকে। এর পর প্রথাগত ইতিহাস চর্চায় গৌরবময় অধ্যায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে মধ্যযুগ পর্যন্ত।

book Struggle, Bengalis , far-reaching history, Bengali nation

মধ্যযুগে ইতিহাস চর্চার মধ্যমণি হয়ে অবতীর্ণ হন মুসলমান ঐতিহাসিকগণ। তাঁদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রণোদনা ছিল ইতিহাস রচনার পক্ষে। রাজ্য বিজয়ের পাশাপাশি বিজয়ের গৌরবগাঁথা তুলে ধরতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হত। এভাবে মুসলিম শাসিত অঞ্চলগুলোতে ইতিহাস চর্চার উজ্জ্বল ধারা অব্যাহত ছিল। এরই সূত্রে দেখা যায় ইতিহাস পঠনপাঠন ও পুনর্গঠনের চর্চায় মধ্যযুগের হুসেন শাহী বংশের অবদান তুলনারহিত। এ সময় থেকে বাঙালি জাতি নিজেদের উত্থানে একটি নির্দিষ্ট রূপ পায়। এই শাহী শাসকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে বাংলা সাহিত্যের বিকাশসহ শিল্পসংস্কৃতির প্রসার ঘটানো। এরই ফল স্বরূপ ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৌহাদ্য ও সম্প্রীতি অটুট থেকেছে। ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’ গ্রন্থের ভূমিকাংশে তারই একটি চমৎকার উপস্থাপনা বিম্বিত হয়েছে। গ্রন্থটির ভূমিকা ও সম্পাদকীয় বক্তব্যের নির্যাসে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, ১৯৪৭ সালের ধর্মীয় বিভিন্নতার প্রশ্নে দেশবিভক্তি, ভারত পাকিস্তান নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রগঠন পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্যের অসারতা প্রমাণ, ভাষাভিত্তিক জাতিগঠনের সংগ্রাম, পরবর্তী পঁচিশ বছরের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্ভব প্রভৃতি বিষয়ক বিদগ্ধ আলোচনা ও পর্যালোচনা একান্তই প্রশংসার যোগ্য।

ইতিহাস বিষয়ক এই গ্রন্থটি গবেষণা, বিদ্যাবত্তা ও পাণ্ডিত্যের এক অনন্য সাধারণ নিদর্শন। বাঙালি জাতির ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, ধর্মদর্শন, ভাবসাধনা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিপ্রায় স্বতঃপ্রণোদিত আবেদনে বিম্বিত হয়েছে। গ্রন্থে চব্বিশ জন বিদগ্ধ ও প্রথিতযশা লেখকের ২৯ টি প্রবন্ধে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ভাবনা গভীরতর আবেদন নিরূপণে বৈপ্লবিকতা অর্জিত হয়েছে। বাংলা, বাঙালি ও বাঙালিত্বকে পুর্ণাবয়ব প্রতিকৃতির চেহারায় নিরূপিত করার আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রন্থটিতে বিম্বিত হয়েছে।

দৈশিক, কালিক, নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শৈক্ষিক ও আর্থিক অবস্থানের চিন্তাচেতনা অনুভবের রূপ ও স্বরূপে জানবার ও বুঝবার প্রাসঙ্গিকতা আলেখ্য হিসেবে বিবেচ্য। জীবন ও জীবন চেতনায় উচ্চারিত, উদ্ভাসিত ও লিপিকৃত লঘুগুর রূপ বাস্তবতার নিরিখে জীবনালেখ্য হিসেবে উৎসারিত হয়েছে। বিশেষত গ্রন্থের অভ্যন্তরীণ ২৯ টি প্রবন্ধের শিরোনাম কৌতূহলী জিজ্ঞাসাকে যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে নিবৃত্তিকরণে তত্ত্ব ও তাৎপর্যে প্রাজ্ঞতা পেয়েছে।

ইতিহাসের সূত্রে শিরোনামগুলোর বিচার বিশ্লেষণ কালোপযোগী রূপে তত্ত্বের লাবণ্যে ঋদ্ধ করেছে। ইতিহাসকে তথ্যের স্বাস্থ্যে, বক্তব্যে ও বিন্যাসে উৎকর্ষতা বিধান করেছে। দেশকালের পটে ও প্রয়োজনীয় আবেদন নিবেদনসহ বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য টীকাভাষ্যে জীবনঘনিষ্ঠ রূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আন্তরিকতার সাথে অনুপ্রাণিত করে। বাঙালি তার দোষগুণ, লজ্জাগৌরব ও মন মননের বিম্বিত রূপ দেখতে পায় ইতিহাসের আয়নায়। এ আয়নায় আরও দেখতে পায় দেশকাল ও জাতির প্রতিকৃতি। গ্রন্থটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পঠনপাঠনে এমন প্রতিবিম্ব সহজেই অনুধাবনীয় হয়ে ওঠে। ফলে বাংলা, বাঙালি ও বাঙালি জাতির অস্তিত্বের চিত্রণ অনায়াসলব্ধ প্রীতির সূত্রে প্রান্তপর্বকে স্পর্শ করে। যা লেখকগণের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধাবী আলোচনার মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর জীবনে নবজীবন উল্লম্ফিত হতে চায়। আর এমন একটি কালজয়ী মহৎ কাজ করার জন্য সাহসী সৈনিক হিসেবে গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশন সংস্থার সম্পাদক ফারুক আহমেদ একক কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ নিরলস প্রচেষ্টার কারণে এমন একটি কালস্পর্শী গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে।

এছাড়াও গ্রন্থটির নজরকাড়া প্রচ্ছদ, মানসম্মত ও ঝকঝকে মুদ্রণ এবং বাঁধাই গ্রন্থটিকে নান্দনিকতা বৃদ্ধি করেছে। যা অধিক তাৎপর্যে আকর্ষণীয় মাত্রায় সমুজ্জ্বল হতে পেরেছে। বাঙালির জাতিসত্ত্বা ও বাঙালিত্ব নিয়ে যখন নানা সংশয় প্রকট থেকে প্রকটতর রূপ নিতে চায়। তখন ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসা’র মতই এই শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করে সম্পাদক ফারুক আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতির কাণ্ডারি হিসেবে সমস্যার সমাধান ও তার উত্তরণে এগিয়ে এসেছেন। সেইসঙ্গে গ্রন্থের বিক্রয়লব্ধ অর্থ দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রসারের জন্য ব্যয় করার ঘোষণাটি অধিকতর স্বতন্ত্রমাত্রা এনে দিয়েছে। এমন একটি ভালো কাজ করে তিনি জাতিকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সঙ্গত কারণে আমি বইটির প্রচার ও প্রসার কামনা করি।