২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইন্তেকাল বিখ্যাত আলেম ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের, জানাযা মসজিদে নবাবীতে– দাফন জান্নাতুল বাকিতে

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার
  • / 1

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ বিশ্ববিখ্যাত আলেম ও পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অনুবাদক ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের ইন্তেকাল (ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজ্বিউন)। মদিনা শরীফে ১৪ জুলাই বুধবার ইন্তেকাল হয় ইসলামি দুনিয়ার এই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বৃহস্পতিবার মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে ফজরবাদ তাঁর নামায-এ-জানাযা হয়। তাঁকে দাফন করা হয়েছে পবিত্র জান্নাতুল বাকি গোরস্থানে।

মুহাম্মদ মহসিন খানের জন্ম পাকিস্তানে। আফগানিস্তান থেকে হিযরত করে আসে এই খান পরিবার। সেই পিরিওডে আফগানিস্তানের মানুষ খুব কমই সুযোগ পেতেন ইংল্যান্ডে ডাক্তারি পড়ার। মুহাম্মদ মহসিন লাহোরে পড়া শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান তিনি। সেখান থেকে ডাক্তারির উচ্চ ডিগ্রি হাসিল করে চাকরি করতে চলে আসেন সৌদি আরবে কিং আবদুল আজিজের সময়। পশ্চিমা দুনিয়ায় পড়াশুনা করা মহসিন খান ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন না। এ কথা মুহাম্মদ মহসিন খান নিজেও জানিয়েছেন। কেবলমাত্র মোটা মাইনের চাকরির জন্য তায়েফের এক মিলিটারি হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। পরে মদিনার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ডাইরেক্টর পদে আসীন হন।

১৯৬১ সালে মদিনায় ইসলামি বিশ্ব বিদ্যালয়ে চালু হলে সেখানে ড. মহসিন খানকে পাঠানো হয়। মদিনা শরীফে একদিন স্বপ্ন দেখে তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ও গ্রান্ড মুফতি শাইখ মুহাম্মদ ইবনে বাজকে তাঁর স্বপ্নের কথা জানান। শাইখ ইমাম বাজ ডা. মুহসিন খানকে তাঁর স্বপ্নের অর্থ জানান– কুরআন সুন্নাহর প্রতি বিশেষ খিদমাতের ইশারা করা হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়। ডা. খান জানান যে– তিনি নিজে একজন চিকিৎসক। দ্বীনি ইলম বিশেষ নেই। কীভাবে কুরআন সুন্নাহর খিদমাত করবেন। সেদিন তিনি ভেবেছিলেন যেহেতু তিনি ইংরেজিতে দক্ষ তাই আরবি কুরআন ও হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ তিনি হয়তো করতে পারেন। আর সেই সময় এর প্রয়োজনও ছিল বেশি। তারপর দীর্ঘ সাধনা শুরু হয়– আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের। কয়েক বছরের সাধনার পর তাঁর বিশ্বখ্যাত অনুবাদ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ‘দ্য নোবেল কুরআন’ প্রকাশিত হয়।

সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ইমাম বাজের নির্দেশ মতো ইসলামিক স্টাডিজ-এর পিএইচডি করা ড. তাকি আল হিলালির সঙ্গে যৌথভাবে অনুবাদের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন ডা. মুহসিন খান। সহিহ আল বুখারির সব কয়টি খণ্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ডা. খান। ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের অনবদ্য অনুবাদ গ্রন্থ ‘কুরআন ও ‘হাদিস’ বিশ্বের প্রায় সমস্ত বড় লাইব্রেরিতে শোভা পাচ্ছে। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হচ্ছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। সৌদি আরব সরকারও প্রতিবছর এই অনুবাদ কুরআন শরীফ লক্ষ লক্ষ কপি বিতরণ করে থাকে।

এছাড়াও তিনি বহু প্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রোড টু প্যারাডাইজ’– ‘তফসির আহসানুল বায়ান’– ‘আন্ডার স্ট্যান্ডিং রমাযান’। তাঁর ইন্তেকালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শোকবার্তা জ্ঞাপন করছেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইন্তেকাল বিখ্যাত আলেম ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের, জানাযা মসজিদে নবাবীতে– দাফন জান্নাতুল বাকিতে

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ বিশ্ববিখ্যাত আলেম ও পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অনুবাদক ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের ইন্তেকাল (ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজ্বিউন)। মদিনা শরীফে ১৪ জুলাই বুধবার ইন্তেকাল হয় ইসলামি দুনিয়ার এই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বৃহস্পতিবার মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে ফজরবাদ তাঁর নামায-এ-জানাযা হয়। তাঁকে দাফন করা হয়েছে পবিত্র জান্নাতুল বাকি গোরস্থানে।

মুহাম্মদ মহসিন খানের জন্ম পাকিস্তানে। আফগানিস্তান থেকে হিযরত করে আসে এই খান পরিবার। সেই পিরিওডে আফগানিস্তানের মানুষ খুব কমই সুযোগ পেতেন ইংল্যান্ডে ডাক্তারি পড়ার। মুহাম্মদ মহসিন লাহোরে পড়া শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান তিনি। সেখান থেকে ডাক্তারির উচ্চ ডিগ্রি হাসিল করে চাকরি করতে চলে আসেন সৌদি আরবে কিং আবদুল আজিজের সময়। পশ্চিমা দুনিয়ায় পড়াশুনা করা মহসিন খান ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন না। এ কথা মুহাম্মদ মহসিন খান নিজেও জানিয়েছেন। কেবলমাত্র মোটা মাইনের চাকরির জন্য তায়েফের এক মিলিটারি হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। পরে মদিনার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ডাইরেক্টর পদে আসীন হন।

১৯৬১ সালে মদিনায় ইসলামি বিশ্ব বিদ্যালয়ে চালু হলে সেখানে ড. মহসিন খানকে পাঠানো হয়। মদিনা শরীফে একদিন স্বপ্ন দেখে তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ও গ্রান্ড মুফতি শাইখ মুহাম্মদ ইবনে বাজকে তাঁর স্বপ্নের কথা জানান। শাইখ ইমাম বাজ ডা. মুহসিন খানকে তাঁর স্বপ্নের অর্থ জানান– কুরআন সুন্নাহর প্রতি বিশেষ খিদমাতের ইশারা করা হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়। ডা. খান জানান যে– তিনি নিজে একজন চিকিৎসক। দ্বীনি ইলম বিশেষ নেই। কীভাবে কুরআন সুন্নাহর খিদমাত করবেন। সেদিন তিনি ভেবেছিলেন যেহেতু তিনি ইংরেজিতে দক্ষ তাই আরবি কুরআন ও হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ তিনি হয়তো করতে পারেন। আর সেই সময় এর প্রয়োজনও ছিল বেশি। তারপর দীর্ঘ সাধনা শুরু হয়– আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের। কয়েক বছরের সাধনার পর তাঁর বিশ্বখ্যাত অনুবাদ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ‘দ্য নোবেল কুরআন’ প্রকাশিত হয়।

সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ইমাম বাজের নির্দেশ মতো ইসলামিক স্টাডিজ-এর পিএইচডি করা ড. তাকি আল হিলালির সঙ্গে যৌথভাবে অনুবাদের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন ডা. মুহসিন খান। সহিহ আল বুখারির সব কয়টি খণ্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ডা. খান। ডা. মুহাম্মদ মহসিন খানের অনবদ্য অনুবাদ গ্রন্থ ‘কুরআন ও ‘হাদিস’ বিশ্বের প্রায় সমস্ত বড় লাইব্রেরিতে শোভা পাচ্ছে। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হচ্ছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। সৌদি আরব সরকারও প্রতিবছর এই অনুবাদ কুরআন শরীফ লক্ষ লক্ষ কপি বিতরণ করে থাকে।

এছাড়াও তিনি বহু প্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রোড টু প্যারাডাইজ’– ‘তফসির আহসানুল বায়ান’– ‘আন্ডার স্ট্যান্ডিং রমাযান’। তাঁর ইন্তেকালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শোকবার্তা জ্ঞাপন করছেন।