২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ প্রতি ৫জন ক্যান্সার আক্রান্তের ৩জনেরই অকাল মৃত্যু হচ্ছে: রিপোর্ট

Juifa Parveen
  • আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 1

নয়াদিল্লি, ২৪ ফেব্রুয়ারিঃ  ‘ক্যান্সার’-নাম শুনলেই যেন অর্ধেক প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায়। জীবনের প্রতি আশা ছেড়ে দিতে শুরু করে রোগীরা। আর চিকিৎসার বিপুল খরচ তো রয়েইছে। তাই রোগ ধরা পড়তেই সামনের পৃথিবীটা রাতারাতি বদলে যেতে শুরু করে রোগীদের। আইসিএম আর-এর রিপোর্টেও তারই উল্লেখ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোগ ধরা পড়ার পর ভারতে প্রতি পাঁচ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে তিনজনেরই অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

 

দেশের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর বিজ্ঞানীরা ‘গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি’ শীর্ষক একটি প্রজেক্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখেছেন যে, দেশে (অকাল) মৃত্যুর হার ৬৪.৮ শতাংশ। তাঁদের গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে, ক্যান্সারের শিকার পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি হচ্ছে। ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর ঘটনা মহিলাদের মধ্যে আশংকাজনকভাবে দ্রুত বাড়ছে (প্রতি বছর ১.২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে)। পুরুষদের ক্ষেত্রে তা প্রতি বছরে ১.২ শতাংশ থেকে ২.৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।

 

ভারতে এভাবে ক্যান্সারের বাড়বাড়ন্ত ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে চিকিৎসকরা অনেকগুলি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-দেরিতে রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করতে না পারা। একই কথা জানিয়েছেন অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তথা ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অনকোলজি’র সভাপতি ডা. রাজেন্দ্র টপরানি। গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরির তথ্য অনুসারে, ক্যান্সারের কারণে ভারতের আনুমানিক অকাল মৃত্যুর সংখ্যা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। তথ্য বলছে-২০০০ সালে ভারতে ক্যান্সারে যেখানে ৪৯০,০০০জনের অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৯১৭,০০০। গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি হচ্ছে ক্যান্সার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) একটি উদ্যোগ। ১৮৫টি দেশের থেকে তারা ক্যান্সারের তথ্য সংগ্রহ করেছে।

মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঘটনা সবথেকে বেশি। নতুন রোগ ধরা পড়া রোগীদের ক্ষেত্রে তা প্রায় ১৩.৮ শতাংশ। মুখের ক্যান্সার ধরা পড়েছে ১০.৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে, সার্ভিকাল ক্যান্সার ৯.২ শতাংশ, শ্বাসযন্ত্রে ক্যান্সার ৫.৮ শতাংশ, অন্ননালীতে ক্যান্সার ৫ শতাংশ এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার ধরা পড়েছে ৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে। তবে ওরাল ক্যানসার সবথেকে বেশি দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে। নতুন ওরাল ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১৫.৬ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রে ক্যান্সার ৮.৫ শতাংশ, অন্ননালীতে ক্যান্সার ৬.৬ শতাংশ এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ৬.৩ শতাংশ লক্ষ্য করা গিয়েছে। শ্বাসযন্ত্র এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারে উচ্চ মৃত্যুহার লক্ষ্য করা গিয়েছে।

 

এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০০টি নতুন রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা প্রায় ৯৩ জনের। আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথ ইস্ট এশিয়া’তে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শৈশবকালে সচরাচর যে ক্যান্সার দেখা যায় তা হল লিউকোমিয়া। ৪১ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার দেখা যায়। তারপরে মস্তিষ্কের ক্যান্সার (১৩.৬ শতাংশ)। লিউকেমিয়ায় ছেলেদের মধ্যে মৃত্যুহার ৪৩ শতাংশ। এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা ৩৮ শতাংশ। মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ছেলেদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ১৬ শতাংশ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা ১৭ শতাংশ। মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বছরে নতুন ক্যান্সার রোগী মিলছে গড়ে ৭০৪,০০০জন করে। তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ৪৮৪,০০০জনের। যা দেশের ক্যান্সারে মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। রিপোর্টে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, আগামী দুই দশকে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার বছরে দুই শতাংশ করে বৃদ্ধি পাবে।

Tag :

রিপোর্টার

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দেশ প্রতি ৫জন ক্যান্সার আক্রান্তের ৩জনেরই অকাল মৃত্যু হচ্ছে: রিপোর্ট

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার

নয়াদিল্লি, ২৪ ফেব্রুয়ারিঃ  ‘ক্যান্সার’-নাম শুনলেই যেন অর্ধেক প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায়। জীবনের প্রতি আশা ছেড়ে দিতে শুরু করে রোগীরা। আর চিকিৎসার বিপুল খরচ তো রয়েইছে। তাই রোগ ধরা পড়তেই সামনের পৃথিবীটা রাতারাতি বদলে যেতে শুরু করে রোগীদের। আইসিএম আর-এর রিপোর্টেও তারই উল্লেখ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোগ ধরা পড়ার পর ভারতে প্রতি পাঁচ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে তিনজনেরই অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

 

দেশের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর বিজ্ঞানীরা ‘গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি’ শীর্ষক একটি প্রজেক্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখেছেন যে, দেশে (অকাল) মৃত্যুর হার ৬৪.৮ শতাংশ। তাঁদের গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে, ক্যান্সারের শিকার পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি হচ্ছে। ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর ঘটনা মহিলাদের মধ্যে আশংকাজনকভাবে দ্রুত বাড়ছে (প্রতি বছর ১.২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে)। পুরুষদের ক্ষেত্রে তা প্রতি বছরে ১.২ শতাংশ থেকে ২.৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।

 

ভারতে এভাবে ক্যান্সারের বাড়বাড়ন্ত ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে চিকিৎসকরা অনেকগুলি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-দেরিতে রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করতে না পারা। একই কথা জানিয়েছেন অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তথা ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অনকোলজি’র সভাপতি ডা. রাজেন্দ্র টপরানি। গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরির তথ্য অনুসারে, ক্যান্সারের কারণে ভারতের আনুমানিক অকাল মৃত্যুর সংখ্যা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। তথ্য বলছে-২০০০ সালে ভারতে ক্যান্সারে যেখানে ৪৯০,০০০জনের অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৯১৭,০০০। গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি হচ্ছে ক্যান্সার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) একটি উদ্যোগ। ১৮৫টি দেশের থেকে তারা ক্যান্সারের তথ্য সংগ্রহ করেছে।

মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঘটনা সবথেকে বেশি। নতুন রোগ ধরা পড়া রোগীদের ক্ষেত্রে তা প্রায় ১৩.৮ শতাংশ। মুখের ক্যান্সার ধরা পড়েছে ১০.৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে, সার্ভিকাল ক্যান্সার ৯.২ শতাংশ, শ্বাসযন্ত্রে ক্যান্সার ৫.৮ শতাংশ, অন্ননালীতে ক্যান্সার ৫ শতাংশ এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার ধরা পড়েছে ৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে। তবে ওরাল ক্যানসার সবথেকে বেশি দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে। নতুন ওরাল ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১৫.৬ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রে ক্যান্সার ৮.৫ শতাংশ, অন্ননালীতে ক্যান্সার ৬.৬ শতাংশ এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ৬.৩ শতাংশ লক্ষ্য করা গিয়েছে। শ্বাসযন্ত্র এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারে উচ্চ মৃত্যুহার লক্ষ্য করা গিয়েছে।

 

এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০০টি নতুন রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা প্রায় ৯৩ জনের। আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথ ইস্ট এশিয়া’তে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শৈশবকালে সচরাচর যে ক্যান্সার দেখা যায় তা হল লিউকোমিয়া। ৪১ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার দেখা যায়। তারপরে মস্তিষ্কের ক্যান্সার (১৩.৬ শতাংশ)। লিউকেমিয়ায় ছেলেদের মধ্যে মৃত্যুহার ৪৩ শতাংশ। এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা ৩৮ শতাংশ। মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ছেলেদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ১৬ শতাংশ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা ১৭ শতাংশ। মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বছরে নতুন ক্যান্সার রোগী মিলছে গড়ে ৭০৪,০০০জন করে। তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ৪৮৪,০০০জনের। যা দেশের ক্যান্সারে মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। রিপোর্টে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, আগামী দুই দশকে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার বছরে দুই শতাংশ করে বৃদ্ধি পাবে।